কর্পোরেশন গেট ভেঙে মেয়রের ঘরে বিজেপি অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদন, চন্দননগর: আজ দুপুর ১২টা নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে উঠল চন্দননগর কর্পোরেশন চত্বর। ৭ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বিজেপির (BJP) বিক্ষোভ মিছিল পৌঁছল কর্পোরেশন গেট…

নিজস্ব প্রতিবেদন, চন্দননগর: আজ দুপুর ১২টা নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে উঠল চন্দননগর কর্পোরেশন চত্বর। ৭ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বিজেপির (BJP) বিক্ষোভ মিছিল পৌঁছল কর্পোরেশন গেট পর্যন্ত। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে পড়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। গেট বন্ধ থাকায় ধাক্কাধাক্কির জেরে শেষমেশ ভেঙে পড়ে কর্পোরেশনের প্রধান ফটক। তারপর বিজেপি কর্মী ও নেতা-কর্মীরা সোজা ঢুকে পড়ে কর্পোরেশনের মূল দপ্তরে, লক্ষ্য মেয়রের ঘর।

Advertisements

যদিও সেই সময় মেয়র নিজে অফিসে উপস্থিত ছিলেন না, ফলে স্মারকলিপি জমা না দিয়েই ফিরে যেতে হয় বিজেপি প্রতিনিধিদলকে। তবে বিজেপির তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা আবার আসবেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

   

বিজেপি-র অভিযোগ, চন্দননগর কর্পোরেশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নেই। বেহাল পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা, বেকার যুবকদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি না হওয়া, কর্পোরেশনের পক্ষপাতদুষ্ট পরিষেবা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মতো একাধিক অভিযোগ তুলে ৭ দফা দাবিপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বিজেপির।

চন্দননগরের বিখ্যাত ছবি ঘর থেকে মিছিল শুরু হয়, যেখানে শতাধিক বিজেপি সমর্থক জড়ো হন। স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা কর্পোরেশনের মূল গেটের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু তাতেও থামেনি বিক্ষোভকারীরা। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। কয়েক মিনিটের মধ্যে কর্পোরেশনের লোহার গেট ভেঙে পড়ে। সেই সুযোগে বিজেপি নেতা-কর্মীরা মূল ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং মেয়রের ঘরের সামনে অবস্থান নেন।

এই ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী, নেতৃত্বে ছিলেন আইসি নিজে। পুলিশ বিজেপি কর্মীদের বাইরে বের করে দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং অনুমতি ছাড়া কর্পোরেশন ভবনে ঢোকার ঘটনায় আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্য নেতারা জানিয়েছেন, চন্দননগরে সাধারণ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। এই আন্দোলন মানুষের দাবির ভিত্তিতে। তারা আরও জানিয়েছেন, মেয়রের অনুপস্থিতি অজুহাত হতে পারে না, দাবিপত্র জমা না দেওয়ার সুযোগ তাঁরা আবার করে নেবেন।

এদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। শাসকদলের বক্তব্য, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করতে চাইছে। তাঁদের মতে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে এই ধরনের গুন্ডাগিরি বরদাস্ত করা হবে না।

ঘটনাটি নিয়ে চন্দননগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকা আইনসিদ্ধ নয়, আবার কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিক পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে, তাই মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো বিজেপির এই আন্দোলন সঠিক।

আজকের ঘটনায় ফের প্রমাণিত হল রাজনীতির উত্তাপ চন্দননগরেও ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়রের অনুপস্থিতিতে স্মারকলিপি জমা দেওয়া না হলেও বিজেপি জানিয়েছে, দাবি আদায়ের লড়াই চলবে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।