মমতার মুখোমুখি বসার ঘোষণা! সৌমিত্রের সাহসে বদলের খেলা বিষ্ণুপুরে?

এ যেন অনেকটা সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী হবার মত পরিস্থিতি সৌমিত্র খাঁয়ের (Saumitra Khan)। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তার মতানৈক্য মনোমালিন্য বহু বছরের। কিন্তু কখনও তিনি…

Saumitra Khan,Mamata Banerjee

এ যেন অনেকটা সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী হবার মত পরিস্থিতি সৌমিত্র খাঁয়ের (Saumitra Khan)। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তার মতানৈক্য মনোমালিন্য বহু বছরের। কিন্তু কখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করার কথা জনসমক্ষে ঘোষণা করেননি। তেমনই চরম নিষ্ক্রিয়তা বা উদাসীনতাও দেখাননি বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের প্রতি। কিন্তু এবার তাঁর গলায় অন্য সুর। আর তাতেই সম্ভাবনার অন্য সমীকরণ খুজতে শুরু করেছে বঙ্গ রাজনীতির বিশেষজ্ঞ মহল।

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে প্রতিপক্ষ নিজের প্রাক্তন স্ত্রী থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনাম শোনা গিয়েছিল বিষ্ণুপুরের জয়ী সাংসদ সৌমিত্রর মুখে। এবার আরও একধাপ এগিয়ে আত্ম-সমালোচনার সুর তাঁর গলাতে। সৌমিত্রর পরিষ্কার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদেরকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু তারা কোনও সুযোগই কাজে লাগাতে পারেননি সেইভাবে। ঘুরিয়ে কী তিনি অভিযোগের আঙ্গুল তুললেন বঙ্গ বিজেপির হেভিওয়েটেদের দিকে?

   

বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির অন্দরমহলে এই দোষারোপের চিত্রটা খুব স্বাভাবিক একটা দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনও দিলীপ কখনও জগন্নাথ সরকার, তো কখনও সৌমিত্র আবার কখনও লকেট, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে একাধিক জয়ী বা পরাজিত নেতা-নেত্রীদের গলায়। কিন্ত লোকসভা ভোটের বহু আগে থেকেই সৌমিত্র বরাবরই ছিলেন সোচ্চার। এমনকী জয়ী হওয়ার পরে তাঁর আক্রমণের ধার যেন আরও বেড়েছে কয়েক গুণ।

কিন্তু এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে সৌমিত্রর পরিষ্কার ঘোষণা, প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখা বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করতেও তিনি পিছপা হবেন না। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, বিষ্ণুপুরের উন্নতির জন্য তাঁকে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরণাপন্ন হতে হয় তাহলে তিনি তাতেও কোনো রকম দ্বিধাবোধ করবেন না। সেই সঙ্গে তার আরও সংযোজন, বিজেপির যে সমস্ত কর্মীরা তার উপরে ভরসা রেখেছেন তাদের মান সম্মান যাতে থাকে সেদিকে তিনি পরিষ্কার দৃষ্টি রাখবেন।

এর আগে যখন সৌমিত্র তৃণমূলে ছিলেন, তখন বিষ্ণুপুরে মমতার অন্যতম ভরসার লোক ছিলেন তিনিই। আবার অন্যদিকে, আসন্ন চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তারকা প্রচারকদের লিস্ট ঘোষণা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সেখানে নেই বিষ্ণুপুরের জয়ী সাংসদের নাম। অর্থাৎ একদিকে মমতার সাথে পুরনো সখ্যতা, অন্যদিকে বিজেপির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব, দুই অঙ্ক মিলিয়ে কিন্তু জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।

আর এখানেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্ক কষা। কখনও তৃণমূল নেতার পা ধরে প্রণাম করা, আবার কখনও ঘুরিয়ে মমতার স্তুতি! সৌমিত্রর ব্যাপার-স্যাপার যেন ক্রমশই সন্দেহজনক লাগছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। এর আগে ঘোষণা করেছিলেন যে প্রশান্ত কিশোরের মত রাজনৈতিক উপদেষ্টা হতে পারেন। কোম্পানি খোলার সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন। নিজেই নিজের উপদেষ্টা হয়ে সৌমিত্র কোনও নতুন খেলা খেলছেন কিনা, সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করার কথায়, সৌমিত্রর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার গুজবের পালে খুব সম্ভবত আরো জোরদার হাওয়া লাগতে চলেছে।