পার্টি অফিস ভাঙচুরের হুমকি! ঘাটালে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে ফের বিজেপির (BJP) অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। রাতের অন্ধকারে ডেবরার একাধিক স্থানে বিজেপির জেলা সভাপতির ছবি সম্বলিত পোস্টার পড়েছে, যেখানে ২০১৮…

BJP Factional Feud in Ghatal: Party Office Vandalism Threat Sparks Political Tension

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে ফের বিজেপির (BJP) অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। রাতের অন্ধকারে ডেবরার একাধিক স্থানে বিজেপির জেলা সভাপতির ছবি সম্বলিত পোস্টার পড়েছে, যেখানে ২০১৮ সালের মতো পার্টি অফিস ভাঙচুরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই পোস্টারগুলোতে লেখা রয়েছে, “এর পরেও যদি পুনরায় ওনাকে জেলা সভাপতি করা হয় তাহলে ২০১৮-এর মতো পার্টি অফিস আবার ভাঙচুর করা হবে।” পোস্টারে দাবি করা হয়েছে যে, এটি ঘাটালের বিজেপি কর্মীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডেবরায় রাজনৈতিক তরজা তীব্র হয়ে উঠেছে।

পোস্টারে যিনি লক্ষ্যবস্তু, তিনি হলেন বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তন্ময় দাস। তিনি এই ঘটনার জন্য দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরিবর্তে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন। তন্ময় দাস বলেন, “এটা বিজেপি কর্মীদের কাজ নয়। এটি তৃণমূলের চক্রান্ত। এর আগেও আমাদের প্রাক্তন জেলা সভাপতির নামে পোস্টার পড়েছিল। আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” তিনি আরও জানান, এই ধরনের ঘটনা দলের ঐক্যকে প্রভাবিত করবে না এবং পুলিশের তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। যুব তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “এই ঘটনায় বিজেপিকেই বিজেপি বিশ্বাস করতে পারছে না। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় যেই সভাপতি হয়ে আসুক, তাকে শূন্য হাতে ফিরতে হবে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” তিনি আরও দাবি করেন যে, বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এই ঘটনার মূল কারণ এবং তৃণমূলের এর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।

২০১৮ সালে বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরে রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছিল। সেই সময় দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছিল। এবারের পোস্টারে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা বিজেপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঘাটালে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং এই পোস্টার তারই একটি প্রকাশ।

এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তাদের এই প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা জানিয়েছেন, জেলা সভাপতির পদ নিয়ে একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে এবং এই পোস্টার তারই ফল।

পোস্টার প্রকাশের পর ডেবরায় রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনাকে তৃণমূলের ‘চক্রান্ত’ বলে অভিযোগ করলেও, তৃণমূল পাল্টা দাবি করেছে যে, এটি বিজেপির নিজস্ব সমস্যা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ধরনের পোস্টার রাতের অন্ধকারে টাঙানো হয়েছে এবং এর পিছনে কারা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

Advertisements

তন্ময় দাস ইতিমধ্যে ডেবরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা পুলিশের কাছে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছি। যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” তবে, তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, অতীতে এই ধরনের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনা ঘাটালে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সমাধান না হয়, তাহলে আগামী দিনে বিজেপির প্রভাব কমতে পারে। তৃণমূল এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “বিজেপির এই অভ্যন্তরীণ সমস্যা তাদের দুর্বল করছে। আমরা জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাব।”

এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, আবার কেউ বলছেন, নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

ঘাটালে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং পার্টি অফিস ভাঙচুরের হুমকি নতুন নয়, তবে এটি দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও ঐক্যের প্রশ্ন তুলেছে। পোস্টার ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চলা তরজা এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। পুলিশ তদন্তে এই ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে তা বেরিয়ে এলে সত্য প্রকাশ পাবে। তবে এই ঘটনা বিজেপির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আগামী দিনে তাদের কৌশল ও সাংগঠনিক শক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।