বীরভূমে অবৈধ বালিখাদানে লাগাম, জেলাশাসকের কড়া পদক্ষেপ

শুক্রবার ভোরের নীরবতা ভেঙে চাঞ্চল্য ছড়াল বীরভূম জেলার (Birbhum) মহম্মদবাজারের ময়ূরাক্ষী নদী এলাকায়। জেলার অন্যতম চর্চিত খয়ড়াকুড়ি মোল্লাই বালি ঘাটে আচমকা হাজির হলেন জেলা প্রশাসনের…

birbhum-crackdown-on-illegal-sand-mining-district-magistrates-stern-action

শুক্রবার ভোরের নীরবতা ভেঙে চাঞ্চল্য ছড়াল বীরভূম জেলার (Birbhum) মহম্মদবাজারের ময়ূরাক্ষী নদী এলাকায়। জেলার অন্যতম চর্চিত খয়ড়াকুড়ি মোল্লাই বালি ঘাটে আচমকা হাজির হলেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা। নেতৃত্বে ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা পুলিশের আধিকারিক এবং খনিজ দপ্তরের কর্মীরা। প্রশাসনের এই হানা ছিল মূলত অবৈধ বালি তোলার বিরুদ্ধে। গত কয়েক মাস ধরেই এলাকায় অভিযোগ উঠছিল, রাতের অন্ধকারে নদী থেকে নির্বিচারে বালি তুলে তা বিভিন্ন ট্রাক্টর ও ট্রাকে বোঝাই করে পাচার করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোরের এই অভিযানে সেই অভিযোগের অনেকটাই প্রমাণ মিলল।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, জেলাশাসকের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে একে একে আটক করা হয় ৫০টিরও বেশি অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক্টর। আশ্চর্যের বিষয়, এই ট্রাক্টরগুলির অধিকাংশেরই নম্বর প্লেট ছিল না। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে এগুলি চোরাপথে চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ট্রাক্টরগুলিতে সদ্য নদী থেকে তোলা বালি বোঝাই করা ছিল। অর্থাৎ, অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগেই বা ঠিক সেই সময়েই বালি তোলা হচ্ছিল।

   

এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরেই মহম্মদবাজার-সহ ময়ূরাক্ষী নদীর বিভিন্ন ঘাটে অবৈধ বালি তোলার অভিযোগ উঠে আসছিল। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। বালি তুলে নেওয়ার কারণে নদীর তলদেশ দ্রুত গভীর হচ্ছে, ভাঙন দেখা দিচ্ছে পাড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি। অথচ এতদিন পর্যন্ত কোনও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুক্রবারের অভিযান তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

অন্যদিকে, বালি মাফিয়াদের একাংশের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকার অভিযোগ নতুন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট বলেই এই অবৈধ কাজ এতদিন ধরে নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব হয়েছে। প্রশাসনের(Birbhum) এই আকস্মিক অভিযান সেই স্বার্থে বড় ধাক্কা দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে এই পদক্ষেপ কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন অভিযানে নেমে বালি বোঝাই গাড়ি আটক করেছে, জরিমানা আদায় করেছে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফের একই ছবি দেখা গিয়েছে।

Advertisements

এই প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মত, শুধু অভিযান চালিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। অবৈধ বালি তোলার বিরুদ্ধে আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে নদী ঘাটগুলিতে। স্থানীয় মানুষদেরও সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরা এ ধরনের কাজের প্রতিবাদ করেন এবং প্রশাসনকে খবর দেন। কারণ পরিবেশের ক্ষতি হলে তার প্রভাব পড়বে তাঁদের জীবন-জীবিকায়।

অভিযানের পর জেলাশাসক বিধান রায় সাংবাদিকদের জানান, “বালি মাফিয়াদের কোনওরকম ছাড় দেওয়া হবে না। নিয়ম না মেনে বালি তোলার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর এই বার্তা প্রশাসনের কড়া অবস্থানকেই স্পষ্ট করেছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, আটক হওয়া সমস্ত ট্রাক্টরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আইনি পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি, কোন কোন ঘাট থেকে নিয়মভঙ্গ করে বালি তোলা হচ্ছে, তারও খোঁজ চলছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, শুক্রবার ভোরের অভিযান বীরভূমের মহম্মদবাজার এলাকায় বড় বার্তা দিয়েছে। বালি মাফিয়াদের কাছে যেমন এটি সতর্কবার্তা, তেমনই সাধারণ মানুষের কাছে স্বস্তি। এখন দেখার বিষয়, এই পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে কতটা কার্যকর হয় এবং সত্যিই অবৈধ বালি তোলার দৌরাত্ম্য কতটা কমে। যদি প্রশাসন নিয়মিতভাবে এভাবে নজরদারি চালায়, তবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।