ভূত চতুর্দশীর আগে জেনে নিন চোদ্দোশাকের আসল রহস্য

bhoot-chaturdashi-choddo-shaak-list-benefits

রাত পোহালেই ভূত চতুর্দশী! দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের দিন বাঙালির ঘরে ঘরে এক বিশেষ আয়োজন চোদ্দো শাক খাওয়ার প্রথা। কালীপুজোর আগমনী মুহূর্ত এবং আলোর উৎসবের প্রাক্কালে এই দিনটি বাঙালির সংস্কৃতিতে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ভূত চতুর্দশীর দিনে যিনি চোদ্দো শাক খেয়ে থাকেন, তাঁর থেকে যমরাজ দূরে থাকেন, অশুভ শক্তি এবং নেতিবাচক শক্তি ঘেঁষতে পারে না।

Advertisements

আসলে এই চোদ্দো শাকের প্রথা কেবল ধর্মীয় নয়, বরং গভীরভাবে যুক্ত আমাদের প্রকৃতি ও স্বাস্থ্যসচেতনতার সঙ্গে। আশ্বিন মাসের শেষ দিকে, যখন আবহাওয়া পাল্টে যায়, শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সময় নানা প্রকার শাকসবজি খাওয়া শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এই চোদ্দো শাকে থাকে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

চীন-ভারত সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, ফের মিলবে সাংহাই–দিল্লি সরাসরি ফ্লাইট

এবার দেখে নেওয়া যাক এই চোদ্দো শাকের নাম এবং তাদের উপকারিতা। ওল যা জমে সহায়তা করে, গ্যাসের সমস্যা কমায়। কেঁউ প্রদাহ কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বেতো আয়রনের উৎস, রক্তাল্পতা প্রতিরোধে উপকারী। কালকাসুন্দে চর্মরোগ নিরাময়ে উপযোগী। সরিষা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, কোলেস্টেরল কমায়।

নিম জীবাণুনাশক ও ডিটক্সিফায়ার হিসেবে খ্যাত। জয়ন্তী জ্বর ও সর্দি প্রতিরোধে সহায়তা করে। শালিঞ্চ বা শাঞ্চে রক্ত পরিশোধনে কার্যকর। গুলঞ্চ বা গুড়ুচী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পটুক বা পটোল পত্র শরীর ঠান্ডা রাখে ও হজমে সাহায্য করে।

Advertisements

শেলূকা কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হিলমোচিকা বা হিঞ্চে (লিভারের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। ভণ্টাকী বা ঘেঁটু ডিটক্সিফাই করে ও পেট পরিষ্কার রাখে। সুনিষণ্ণক বা সুষুনি শাক চোখ ও স্নায়ুর জন্য উপকারী।

বাঙালির ঘরে ভূত চতুর্দশীর সকালে মা বা ঠাকুমারা এই চোদ্দো শাক একসঙ্গে ভেজে পরিবেশন করেন। কেউ আবার আলাদা আলাদা করে রান্না করেন, কেউবা একত্রে মিশিয়ে ভাজেন। এই শাক ভাজা খাওয়ার পরেই শুরু হয় ঘরবাড়ি সাজানোর কাজ, কালীপুজো ও দীপাবলির প্রস্তুতি। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ঘরের বারো কোণে প্রদীপ জ্বালানো হয়, যাতে অশুভ আত্মা ও অন্ধকারের শক্তি দূরে থাকে।

কেউ কেউ আবার মৃত আত্মীয়ের স্মরণে প্রদীপ জ্বালিয়ে শান্তি কামনা করেন। আধুনিক প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ এই প্রথাকে শুধুমাত্র কুসংস্কার হিসেবে দেখলেও, বাস্তবে এটি এক অসাধারণ প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যবিধি। চোদ্দো শাক শরীরকে রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী করে, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করে এবং পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।