বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (BGBS) প্রথম দিনেই সুখবর শোনা গেল মৎস্য ক্ষেত্রে। মোট ১২৬ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার বিপুল বিনিয়োগ ঘটেছে মৎস্য ক্ষেত্রে। মিষ্টি জল, নোনা জল এবং সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই প্রথম এত বড় বিনিয়োগ হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরে।
এমন একটি বিনিয়োগ মৎস্যজীবীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই বিনিয়োগের (BGBS) ফলে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পূর্ব মেদিনীপুরে মৎস্য চাষের জন্য উপযুক্ত এলাকা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন এই জেলার উপকূল এলাকা প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার উপকূলবর্তী অংশ রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে।
হলদি, হুগলি, রসুলপুর নদী মোহনা সহ সাগরপাড়ে মৎস্যজীবীরা বসবাস করেন। জেলার বিভিন্ন জায়গায় যেমন রামনগর, কাঁথি, খেজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, সুতাহাটা, মহিষাদল সহ আরও অনেক এলাকায় মৎস্যজীবীদের সংখ্যা বেশ অনেক বেশি। কৃষির পাশাপাশি অনেকেই মাছের ভেড়ি তৈরি করেছেন এবং নদী-সাগরে মাছ ধরেন। এই পেশা জেলার প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের জীবিকার উৎস।
এবার সেই মাছ চাষের কাজে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে বছরে ৪,৩০,০০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মিষ্টি জল, নোনা জল ও সামুদ্রিক মাছের সমন্বয়ে এই উৎপাদন হয়। এবার সেই মাছ চাষে নতুন করে বিনিয়োগ আসছে।
ভূপতিনগর থানার মাধাখালির প্রবীরকুমার ভূঁইঞা জানান, “দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। সেই ব্যবসার সমৃদ্ধি ঘটাতে নতুন করে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। এলাকার মাছচাষের কথা ভেবে মাছের খাদ্য সরবরাহ এবং ওষুধের ব্যবসা করব। সরকারের থেকে ভরতুকির পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার আবেদন রাখছি।”
কাঁথির নাউদিঘি এলাকার বাসিন্দা সন্দীপন বেরা। মাছের খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছেন ২০ কোটি টাকা। তার কথায়, “আমরা এত পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করছি ঠিকই। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক লোন পাওয়া, প্রশাসনিক ছাড়পত্র পাওয়া এবং স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা চাই। এতদিন অন্যের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে ব্যবসা করতাম। এবার সেই ব্যবসা নিজেই করতে চাইছি।”
বিভিন্ন উদ্যোক্তা একে একে মৎস্য ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করছেন। নরঘাটের কল্যাণ জানা এক কোটি ২ লক্ষ টাকা, নাচিন্দার সত্যজিৎ মাইতি ২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা এবং দিঘার মৈত্রপুরের ভাস্কর রাও ৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মৎস্য আধিকারিক সৌরেন্দ্রনাথ জানার মতে, ‘‘মিষ্টি জল, নোনা জল এবং সামুদ্রিক মাছ মিলিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ১২৬ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ হয়েছে।’’
এই বিনিয়োগ মৎস্য চাষীদের জন্য শুধু সাফল্য বয়ে আনবে না, জেলা তথা রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উদ্যোগপতিরা তাদের বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। মৎস্য চাষের জন্য এই বিপুল বিনিয়োগ ভবিষ্যতে মৎস্যজীবীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এর ফলে মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে।