আজ লন্ডনের কেলগ কলেজে বাংলার উন্নতি এবং বাংলায় নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বক্তব্য রাখেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (mamata banerjee)। অক্সফোর্ডের অনুমোদিত এই কলেজে বক্তৃতা দিয়ে কিছুটা স্মৃতিমেদুর মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সমাজ মাদ্ধমে পোস্ট করেছেন “শৈশবে বাবাকে হারানোর দিন থেকে আমার জীবন একটি সংগ্রামের পথে পরিণত হয়েছে। এই লড়াই আমি ছাত্রনেতা হিসেবে, বিরোধী দলের কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং এখন জনগণের সরকারের প্রধান হিসেবে চালিয়ে গিয়েছি। সংগ্রাম থেকে আমি কখনো পিছু হটিনি, ভবিষ্যতেও হটব না। কিন্তু বাংলা কে কেউ ছোট করুক বা আমাদের অগ্রগতির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলুক, তা আমি কখনো মেনে নেব না”।
বাংলার উন্নয়নের গল্প
সম্প্রতি মমতা বন্দোপাধ্যায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার উন্নয়নের গল্প তুলে ধরেছেন। বিশ্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জি বাংলার অসাধারণ উন্নয়নের কাহিনি শেয়ার করার সুযোগ পেয়েছেন। এটি তার জন্য একটি ব্যক্তিগত গর্বের মুহূর্ত । তিনি বলেন, “যে বাংলা মডেল আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে গড়ে তুলেছি, তা পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ এবং চিন্তাশীল নেতাদের দ্বারা স্বীকৃত হতে দেখে আমার হৃদয় ভরে উঠেছে। এই অভিজ্ঞতা আমি চিরকাল মনে রাখব।”
মমতা ব্যানার্জি অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে ‘সামাজিক উন্নয়ন: পশ্চিমবঙ্গে নারী ও শিশু ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি বাংলার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প এবং নারী ও শিশুদের জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরেন। তার বক্তৃতায় রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোর ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের উল্লেখ ছিল। তিনি বলেন, “আমরা যে পথে এগিয়েছি, তা কঠিন ছিল। কিন্তু জনগণের সমর্থন এবং আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলা আজ একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে।”
অনুষ্ঠানে একটি বিতর্কিত ঘটনা
তবে এই অনুষ্ঠানে একটি বিতর্কিত ঘটনাও ঘটে। মমতার বক্তৃতার সময় একদল বিক্ষোভকারী তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে। তারা রাজ্যে নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা, আর জি কর কলেজ কেলেঙ্কারি এবং হিন্দুদের উপর কথিত হামলার অভিযোগ তুলে ধরে। এই পরিস্থিতিতে মমতা শান্তভাবে উত্তর দেন, “তোমরা তোমাদের দলকে বলো, আমাদের রাজ্যে শক্তি বাড়াও, তারপর আমাদের সঙ্গে লড়াই করো।” তিনি বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং তার বক্তৃতা চালিয়ে যান।
মমতার এই সফর এবং বক্তৃতা বাংলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা যে উন্নয়নের পথে এগিয়েছি, তা শুধু বাংলার জন্য নয়, গোটা বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হতে পারে। আমাদের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পগুলো জনগণের জীবনে পরিবর্তন এনেছে।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “আমরা গরিব মানুষের জন্য কাজ করি। আমাদের লক্ষ্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগোনো।”
অমিত মালব্য মমতার সমালোচনা (mamata banerjee)
এই ঘটনার পর বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য মমতার সমালোচনা করে বলেন, “সাধারণত উগ্র মমতা ব্যানার্জি অক্সফোর্ডে বিক্ষোভের মুখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন। ২০২৬ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি হারবেন।” তবে মমতা এই সমালোচনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, “আমি আমার কাজের মাধ্যমে উত্তর দিই। বাংলার জনগণই আমার শক্তি।”
অক্সফোর্ডে বাংলার গল্প তুলে ধরে মমতা বিশ্ব মঞ্চে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু আমার গর্ব নয়, প্রতিটি বাঙালির গর্ব। আমরা যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছি, তা আমাদের শক্তিশালী করেছে।” তার বক্তৃতায় বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আধুনিক উন্নয়নের মিশ্রণের কথা উঠে আসে। মমতার এই সফর বাংলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা যে পথে এগিয়েছি, তা সহজ ছিল না। কিন্তু আমাদের ত্যাগ এবং পরিশ্রম বৃথা যায়নি।” এই ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।