‘ওবিসি তালিকা শুধুই মুসলিম তোষণ’, তথ্য দিয়ে বিস্ফোরক বঙ্গ বিজেপি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাজ্য বিধানসভায় দাবি করেছেন যে, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (ওবিসি) (bengal-bjp) তালিকা ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি। তিনি জোর দিয়ে…

bengal-bjp slams mamata government

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাজ্য বিধানসভায় দাবি করেছেন যে, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (ওবিসি) (bengal-bjp) তালিকা ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই তালিকা সমাজ-অর্থনৈতিক পশ্চাদপটের ভিত্তিতে এবং পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কমিশনের বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে।

কিন্তু তার এই দাবি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, (bengal-bjp)মমতা সরকারের ওবিসি তালিকা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ‘একতরফা সুবিধা’ প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, যা হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তথ্য-পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়া যাক। (bengal-bjp)প্রসঙ্গত কলকাতা হাইকোর্ট আগেই রায়ের মাধ্যমে জানিয়েছে যে ২০১০ এর পরে যত ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট সন্দেহের জায়গা রাখে।

   

ওবিসি তালিকার পটভূমি: ২০১০-এর আগে ও পরে (bengal-bjp)

২০১০ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৬টি ওবিসি শ্রেণি ছিল। এর মধ্যে ১১টি ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত, এবং বাকি ৫৫টি ছিল অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ, তখন মুসলিম শ্রেণির অনুপাত ছিল মোট ওবিসি শ্রেণির প্রায় ২০%। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে, বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে, ওবিসি তালিকায় নতুন শ্রেণি যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৭৭টি নতুন শ্রেণি ওবিসি (bengal-bjp) তালিকায় যুক্ত হয়, যার মধ্যে ৭৫টিই ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের। এই সিদ্ধান্ত কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৪ সালে বাতিল করে দেয়, এই মর্মে যে ধর্মই ছিল এই শ্রেণিগুলোকে ওবিসি হিসেবে ঘোষণার একমাত্র মানদণ্ড।

২০২৫ সালে মমতা সরকার (bengal-bjp) নতুন করে ওবিসি তালিকা প্রস্তুত করেছে। এই তালিকার প্রথম অংশে মোট ৫১টি শ্রেণি যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪৬টি মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং মাত্র ৫টি অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ, এই অংশে মুসলিম শ্রেণির অনুপাত ৯০%। দ্বিতীয় অংশে ২৫টি শ্রেণি যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২১টি মুসলিম এবং ৪টি অ-মুসলিম, অর্থাৎ ৮৪% মুসলিম শ্রেণি। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে নতুন তালিকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাধান্য অত্যন্ত উচ্চ, যা সমালোচকদের অভিযোগকে আরও জোরালো করে।

সংরক্ষণ বৃদ্ধি: ১৭% কার জন্য?

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৩ জুন, ২০২৫ তারিখে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে (নং ১১০৬-বিসিডব্লিউ/এমআর-৩৩/২০২৫) রাজ্যের সরকারি চাকরি ও পদে ওবিসি সংরক্ষণ ৭% থেকে বাড়িয়ে ১৭% করেছে। (bengal-bjp)এই ১৭% সংরক্ষণের মধ্যে ১০% বরাদ্দ করা হয়েছে ওবিসি-এ (অধিক পিছিয়ে পড়া) এবং ৭% ওবিসি-বি (পিছিয়ে পড়া) শ্রেণির জন্য। প্রশ্ন উঠছে, এই বর্ধিত সংরক্ষণের সুবিধা কারা পাবেন? নতুন ওবিসি তালিকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাধান্য বিবেচনা করলে, সমালোচকরা দাবি করছেন যে এই সংরক্ষণের প্রধান সুবিধাভোগী হবেন মুসলিম সম্প্রদায়।

বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (bengal-bjp) এই বিষয়ে মমতা সরকারের উপর তীব্র সমালোচনা করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অভিযোগ করেছেন, মমতা সরকার ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য ওবিসি সংরক্ষণকে অপব্যবহার করছে এবং হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়ের অধিকার কেড়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে সুবিধা দিচ্ছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও দাবি করেছেন, নতুন তালিকায় হিন্দু সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করা হয়েছে।

আইনি পর্যালোচনা: হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

২০২৪ সালের ২২ মে, কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে জারি করা সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ৭৭টি শ্রেণিকে ওবিসি (bengal-bjp) হিসেবে ঘোষণার একমাত্র মানদণ্ড ছিল ধর্ম। আদালত এই প্রক্রিয়াকে “অবৈধ” বলে অভিহিত করে এবং এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি “অপমান” হিসেবে বর্ণনা করে। হাইকোর্ট আরও নির্দেশ দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কমিশনকে নতুন করে তালিকা তৈরি করতে হবে।

Advertisements

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ৯ ডিসেম্বর, সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণ করে, “সংরক্ষণ ধর্মের ভিত্তিতে দেওয়া যায় না।” রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বাল যুক্তি দেন, সংরক্ষণ পশ্চাদপটের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। তবে আদালত রাজ্যকে সমাজ-অর্থনৈতিক পশ্চাদপট এবং সরকারি চাকরিতে অপ্রতিনিধিত্বের বিষয়ে পরিমাণগত তথ্য প্রদানের নির্দেশ দেয়।

২০২৫ সালের মার্চে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানায়,(bengal-bjp) তারা তিন মাসের মধ্যে নতুন সমীক্ষা সম্পন্ন করবে। এই নতুন তালিকা জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টে পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপিত হবে।

মমতার দাবি: সত্য না মিথ্যা?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি যে ওবিসি তালিকা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সমাজ-অর্থনৈতিক পশ্চাদপটের ভিত্তিতে তৈরি, তথ্য-পরিসংখ্যানের আলোকে সন্দেহজনক। নতুন তালিকায় মুসলিম শ্রেণির অত্যধিক প্রাধান্য এবং অ-মুসলিম শ্রেণির নগণ্য উপস্থিতি এই অভিযোগকে জোর দেয়।

সমালোচকরা বলছেন, (bengal-bjp) এটি ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে, মমতা সরকার দাবি করছে, তাদের জরিপ বৈজ্ঞানিক এবং মণ্ডল কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তবে, হাইকোর্টের রায় এবং সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

তিন শীর্ষ ব্যাঙ্কে FD রেট হ্রাস!কারা দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন? জানুন বিস্তারিত

পশ্চিমবঙ্গের (bengal-bjp) ওবিসি সংরক্ষণ বিতর্ক শুধু রাজনৈতিক নয়, সাংবিধানিক ও সামাজিক ইস্যুও। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় এই বিষয়ে স্পষ্টতা আনতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে, নতুন তালিকা এবং বর্ধিত ১৭% সংরক্ষণ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অধিক সুবিধা প্রদান করছে বলে অভিযোগ উঠছে, যা হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। আগামী দিনে এই ইস্যু রাজ্যের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।