মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানার পুলিশ গতকাল এক বড় সাফল্য অর্জন করেছে। পুলিশ ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগে বিজপুর হালিশহর গ্যাং-এর (Halisahar Gang) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি এবং একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ব্যাংক গ্রাহকদের, বিশেষত মহিলাদের এবং বৃদ্ধ মানুষদের টার্গেট করত।
ব্যাঙ্ক প্রতারণার কৌশল
পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, ধৃতরা প্রথমে ফোন করে ব্যাংকের ডিটেইলস জানতে চাইতো। পরে তারা গ্রাহকদের ব্যাংক একাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে অনলাইন ব্যাঙ্কিং প্রতারণা চালাতো। বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা এই গ্যাংয়ের সদস্যরা এমনই একাধিক প্রতারণা কান্ডে জড়িত ছিল, যেখানে তারা সাধারণ মানুষের টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই গ্যাং-এর সদস্যরা বেশ কয়েকটি থানায় অস্ত্র মামলা এবং মাদক মামলায় জড়িত ছিল।
অভিযান এবং গ্রেফতার
ডোমকল থানার পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে খড়গপুর, টিটাগড় এবং বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এই অভিযানে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃতরা হলেন সাহুল সিং, সেখ কালামুদ্দিন এবং মানিক সিং, যারা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হালিশহর এবং বিজপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, তিন রাউন্ড গুলি এবং একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
ডোমকল থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই হাসনাবাদ, কৃষ্ণনগর, বিজপুর, নোয়াপাড়া, চুঁচুড়া থানা এলাকায় একাধিক অস্ত্র মামলা এবং মাদক মামলায় অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে, যা তাদের গ্রেফতারের জন্য আরেকটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশের তদন্ত এবং পরিকল্পনা
পুলিশ জানিয়েছে, এই গ্যাংটি বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যব্যাপী তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল, এবং তাদের টার্গেট ছিল মূলত ব্যাংক গ্রাহকরা যারা প্রায়শই অনলাইন ব্যাঙ্কিং ব্যবহার করেন। এই গ্যাংটির সদস্যরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো সময় গ্রাহকদের প্রতারণা করতো। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং অন্যান্য সদস্যদের খোঁজে রয়েছে।
ধৃতদের দশ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে শুক্রবার জেলা আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ আশা করছে, ধৃতদের কাছ থেকে আরও তথ্য মিলতে পারে, যা ভবিষ্যতে এই গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে সাহায্য করবে।
পুলিশের বার্তা
ডোমকল থানার পুলিশ জানিয়েছে, “এই ধরনের প্রতারণা একেবারেই সহ্য করা হবে না। আমরা প্রতিটি থানার সঙ্গে সমন্বয় রেখে রাজ্যব্যাপী অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই, প্রতারকদের ধরিয়ে নিরাপদ রাখতে হবে সাধারণ মানুষকে।” পুলিশ আরও জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন এলাকায় আরও অভিযানের পরিকল্পনা করছে এবং মানুষকে সচেতন করতে জনমত তৈরি করার কাজও চালাচ্ছে।
এছাড়া, পুলিশ জনগণকে অনুরোধ করেছে, বিশেষ করে যেসব গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করেন, তারা যেন তাদের একাউন্টের তথ্য কখনো অন্য কারও সাথে শেয়ার না করেন। ফোনের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাঙ্ক তথ্য চাইলে তা অবিলম্বে রিপোর্ট করুন।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই অভিযানে সফলতার জন্য স্থানীয় পুলিশ বাহিনী এবং তাদের সহায়ক দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।