গড়বেতা: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা (Garbeta violent) তিন নম্বর ব্লকের রসকুন্ডু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ রীতিমতো রক্তক্ষয়ী হিংসার রূপ নিল। অভিযোগ উঠেছে সরাসরি খুনের চেষ্টার, আর সেই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন রসকুন্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সঞ্জয় সর্দার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে তীব্র প্রশ্ন।
অভিযোগকারী মহিমা সর্দার জানান, বহুদিন ধরেই নিজের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ঘরবাড়ি ছিল না তাঁর। তাই নিজের মালিকানাধীন বলে দাবি করা জমিতে সামান্য পরিমাণ বালি ফেলে ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই একই জমির দাবি করেন তাঁর ভাইপো সঞ্জয় সর্দার। তিনি সেখানে গাছ লাগানো শুরু করতেই দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বচসা বাঁধে, যা দ্রুতই মারধর ও হিংসার স্তরে পৌঁছে যায়।
মহিমা সর্দারের বক্তব্য, “আমি আমার জমিতে সামান্য বালি রেখেছিলাম। সঞ্জয় এসে বাধা দেয়। সে বলে এটা ওর জমি। আমি জানিয়ে দিই আমার জমিতে গাছ লাগাতে দেব না। এর পরই ও আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। আমার অবস্থা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। পুলিশও ওদের কথাতেই চলে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, এই পারিবারিক জমি বিরোধ বহুদিন ধরেই চলছে। বারবার সালিশি বৈঠক হলেও কোনও পক্ষই সমাধান মানতে রাজি হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এলাকায় উপপ্রধান ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ফলে জমি বিবাদের ঘটনাও অনেকেই রাজনৈতিক ছায়ায় প্রভাবিত বলে মনে করছেন।
এই ঘটনার পর মহিমা সর্দার গড়বেতা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় সর্দার এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় তাঁর পরিবার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অভিযোগকারীদের দাবি, “পুলিশ ইচ্ছে করেই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পঞ্চায়েতের বড় নেতাদের সঙ্গে সঞ্জয়ের দহরম মহরম থাকায় তাকে বাঁচানো হচ্ছে।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রসকুন্ডু অঞ্চলের তৃণমূল নেতা পুরঞ্জয় দে বলেন, “পারিবারিক বিবাদ দুঃখজনক। কোনও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কেউ আইনকে অমান্য করলে দল তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। আমরা চাই আইনত সমাধান হোক। সবাই শান্ত থাকুন।”
অন্যদিকে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ এলাকায় বাড়ি বরাদ্দ, পাকা রাস্তা নির্মাণ, পানীয় জলের লাইনে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন। তার ফলেও দুই পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ দ্রুত বেড়ে ওঠে। জমি বিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই অশান্তিই বিস্ফোরিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
বর্তমানে সোনাবাঁদি গ্রামে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও অভিযুক্তের গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, আইন সবার জন্য সমান না হলে আরও বড় অশান্তি দেখা দিতে পারে। অভিযোগকারী পক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ন্যায়বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে তারা।
