কালীগঞ্জ: নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনেই বিতর্কের জন্ম দিলেন বিজেপি প্রার্থী আশিস ঘোষ। বুথ থেকে বেরিয়ে ভোটদানের প্রতীক হিসেবে কালি লাগানো আঙুল দেখাতে গিয়ে তিনি সরাসরি ক্যামেরার সামনে মধ্যমা (মিডল ফিঙ্গার) তুলে ধরেন-যা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ‘অশালীন ইঙ্গিত’ হিসেবে ধরা হয়। ঘটনাটি মুহূর্তে ভাইরাল হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই আচরণকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ‘অশালীন আচরণ’ বলে কটাক্ষ করেছে, অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী এটিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।
ঘটনাস্থলে কী ঘটেছিল?
বৃহস্পতিবার সকাল সকাল কালীগঞ্জের দেবগ্রামের অন্নপূর্ণা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭৩ নম্বর বুথে ভোট দেন বিজেপি প্রার্থী আশিস ঘোষ। বুথ থেকে বেরিয়ে তিনি ভোটদানের প্রতীক হিসেবে আঙুলে লাগানো কালির ছাপ দেখানোর জন্য ক্যামেরার সামনে হাত তোলেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তিনি দেখান মধ্যমা। এই মুহূর্তটি ক্যামেরায় ধরা পড়তেই শুরু হয় বিতর্ক।
আশিস ঘোষের দাবি: পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ashis ghosh controversy
ঘটনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আশিস ঘোষ দাবি করেন, “বুথে আমায় এমনভাবে কালি লাগানো হয়েছে, যাতে আমি বাধ্য হই মধ্যমা দেখাতে। পরিকল্পনামাফিক বিষয়টি ঘটানো হয়েছে। আমি কোনও অশালীন বার্তা দিতে চাইনি। এটা ভোটকর্মীদের দায়িত্বহীনতা।”
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া: আসল চেহারা বেরিয়ে এল
ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, “নির্বাচনের পরে মানুষকে বিজেপি ঠিক এই আঙুলটাই দেখিয়েছে। এবার নির্বাচনের শুরুতেই তারা তাদের প্রকৃত চরিত্র তুলে ধরল।” সামাজিক মাধ্যমে এই বক্তব্যও ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে।
কালীগঞ্জ ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার মাটিতে বহিরাগত শক্তি বিজেপি অপসংস্কৃতি আমদানি করছে। এই আচরণ তারই প্রমাণ। বাংলার সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এমন আচরণ কখনও কাম্য নয়।”
নির্বাচন কমিশনের নজর
ঘটনাটি নজরে এসেছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের। কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠানো হয়েছে এবং রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্তও হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
বুথে অন্য উত্তেজনা
এই দিনেই দেবগ্রামের চাঁদঘর আদর্শ বিদ্যাপীঠের ৫৪ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থী আশিস ঘোষ ও প্রিসাইডিং অফিসারের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। বিজেপির অভিযোগ ছিল, বুথে তাদের পোলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। আশিস ঘোষ অভিযোগ করেন, “প্রিসাইডিং অফিসার আসলে তৃণমূলের লোক।” পরে অবশ্য ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে এবং বিজেপি এজেন্টকে বুথে বসার অনুমতি দেওয়া হয়।
ত্রিমুখী লড়াই
এই উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ (প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের কন্যা), বিজেপির আশিস ঘোষ এবং বামফ্রন্ট–সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ মুখোমুখি হয়েছেন। সকালেই বড় চাঁদঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৫ নম্বর বুথে ভোট দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী।