পশু চিকিৎসার ওষুধেই নেশা, মুর্শিদাবাদে গ্রেপ্তার ১

মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) পশু (Animal) চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের (medicine) বেআইনি বিক্রি, গ্রেপ্তার (Arrested) ১। মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানার পুলিশ রবিবার রাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে,…

Murshidabad Animal medicine

মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) পশু (Animal) চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের (medicine) বেআইনি বিক্রি, গ্রেপ্তার (Arrested) ১। মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানার পুলিশ রবিবার রাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি পশু চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি ওষুধ বেআইনি ভাবে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পাওয়ার পর সুতি থানার নেতাজি মোড় এলাকা থেকে সুজিত ঘোষ নামে এক ফার্মেসি মালিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১১১টি ‘এভেলিন ভেট’ ওষুধের বোতল।

এটি মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলায় প্রথমবারের মতো এমন এক ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে পশু চিকিৎসার ওষুধ অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছিল। সুজিত ঘোষের বিরুদ্ধে ‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স’ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং সোমবার তাঁকে জঙ্গিপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে।

   

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ‘এভেলিন ভেট’ ওষুধটি মূলত গরু, ঘোড়া, এবং অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি মানুষের জন্য কখনও ব্যবহার উপযোগী হিসেবে অনুমোদিত নয়। তবে এই ওষুধটি মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার কারণে কিছু যুবক এই ওষুধটি অবৈধভাবে মাদক হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে। কয়েক মাস ধরে, সুতি এবং আশেপাশের কিছু এলাকায় হেরোইন ও কাফ সিরাপের নেশা ছেড়ে অনেকেই ‘এভেলিন ভেট’ ওষুধটি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিয়ে নেশা করছেন।

পুলিশ জানায়, এই ওষুধের চাহিদা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে, যার ফলে এর দাম ৩০ টাকার বদলে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ফার্মেসি মালিকরা এই সুযোগে ওষুধটির কালোবাজারি শুরু করেছে। কিছুদিন আগে একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সুতি থানার পুলিশ একটি বাড়ি থেকে ‘এভেলিন ভেট’ ওষুধের বেশ কিছু ফাঁকা বোতল উদ্ধার করেছে। পরে জানা যায়, এই ওষুধটি মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি বোতল থেকে দু’বার সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইনজেকশন নেওয়া যায়, যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এই ওষুধটি অবৈধভাবে ব্যবহারের কারণে যুব সমাজ ও অল্পবয়সীদের মধ্যে মারাত্মকভাবে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। কারণ এর দাম কম এবং নেশার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায়, এটি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। মাদক বিক্রেতারা এই সুযোগে বাজারে এর কালোবাজারি চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, রবিবার রাতেই আরেকটি ঘটনায় সুতি থানার ইসলামপুর বাগান এলাকা থেকে দুলাল হোসেন নামে এক যুবককে ১০৮ বোতল কাশির সিরাপসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, ওই যুবক ওই সিরাপগুলো বাংলাদেশে পাচারের পরিকল্পনা করছিল। পুলিশ ওই যুবককে গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়েও তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, ‘এভেলিন ভেট’ ওষুধের মতো মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন যেকোনো পণ্য বাজারে অবৈধভাবে বিক্রির বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, মাদকচক্র নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করে সমাজের যুবকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পুলিশ প্রশাসন এবং সরকার যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) পুলিশ সুপার জানান, “এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়। আমরা সকলকে সতর্ক করতে চাই যে, মাদক বিক্রি এবং তার ব্যবহার সমাজের জন্য বিপজ্জনক এবং এটি কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

এদিকে, স্থানীয় জনগণও এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করেন, প্রশাসন যদি সক্রিয়ভাবে কাজ না করে, তাহলে যুব সমাজ আরও বিপথে যেতে পারে।

এছাড়া, এই ধরনের ঘটনার পর, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে তারা জানে কীভাবে অবৈধ মাদক বিক্রি এবং ব্যবহার রোধ করা যেতে পারে। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলিও এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করতে পারে। মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) এমন একটি ঘটনা সামনে আসায় এলাকার মানুষ আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে এবং প্রশাসনও তাদের নজরদারি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।