“স্পিকার বোলতা হ্যায় তো…”! সংসদে অভিষেকের পরপর বাউন্সারে দিশাহারা খোদ স্পিকারই?

বুধবার সংসদে দিনটা যেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই (Abhishek Banerjee)। গত মঙ্গলবার সংসদে ২০২৪ সালের বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। আর তারপরের দিন বাজেট নিয়ে আলোচনায় জাতীয় রাজনীতির…

Image of Abhishek Banerjee, a politician, reacting to the budget with a thoughtful expression, likely during in the parlament sesson or a press conference or interview.

বুধবার সংসদে দিনটা যেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই (Abhishek Banerjee)। গত মঙ্গলবার সংসদে ২০২৪ সালের বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। আর তারপরের দিন বাজেট নিয়ে আলোচনায় জাতীয় রাজনীতির সমস্ত লাইম লাইট যেন নিজের দিকে টেনে নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। একের পর এক অভিযোগের বাউন্সার ছুড়লেন অভিষেক (Abhishek Banerjee) আজ সংসদে দাঁড়িয়ে।

 

   

আর সেই বাউন্সারের মুখে ব্যাটিং করতে গিয়ে কার্যত দিশেহারা অবস্থা স্পিকারের। একেক সময় কার্যত স্পিকার অভিষেকের বাকযুদ্ধ দেখা গেল সংসদের অভ্যন্তরে। তবে কোনও ভাবেই যেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে দমানো যায়নি। বক্তৃতার শুরু থেকে শেষ খুনে মেজাজে একের পর এক অভিযোগের বাউন্সার ছুড়েছেন অভিষেক।

 

বুধবার সংসদে BUDGET শব্দটির একটি নতুন মানে দাঁড় করিয়েছেন অভিষেক। তাঁর মতে B মানে Betrayal, U মানে Unemployment, D মানে Deprived, G মানে Ghotala-এর Guarantee, E মানে eccentric আর T মানে Tragedy। অভিষেকের এই নতুন ‘BUDGET’-এর মানে নির্ধারণে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে সংসদের অভ্যন্তরে।

Mamata Banerjee: কোষাগারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা! অথচ মমতার মিটিংয়ে ৬০ লাখ খরচ কর্পোরেশনের?

এরপরে অভিষেক তাঁর প্রত্যেকটি শব্দের চয়নের কারণ ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন। ঝাঁঝালো বক্তব্যে উঠে আসে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার গ্যারান্টি থেকে শুরু করে, নোটবন্দী, কৃষক আত্মহত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ। একের পর এক রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং রেল বাজেটে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষার অভিযোগে সরব হন অভিষেক। তবে অভিষেক স্পিকারের বাকযুদ্ধ চরমে ওঠে কৃষক আত্মহত্যার প্রসঙ্গ এবং কৃষক বিল নিয়ে অভিষেকের বক্তব্যের সময়।

অভিষেক দাবি করেন যে কৃষি বিল নিয়ে সংসদে কোনও আলোচনাই হয়নি। স্পিকার সেই দাবি নস্যাৎ করে বলেন “স্পিকার বোলতা হ্যায় তো বোলতা হ্যায়, মতলব স্পিকার যো বোলতা হ্যায় বো সহি বোলতা হ্যায়”! সে সময় কার্যত বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লক একযোগে স্পিকারের এই বক্তব্যের বিরোধিতা শুরু করেন।

সবমিলিয়ে উত্তপ্ত বাদানুবাদ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমনকী বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকেও চিৎকার করে অভিষেকের বিরোধিতা করতে দেখা যায়। কিন্তু তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিৎকারে কার্যত দমেই যান সৌমিত্র।

সেই সময়ই অভিষেক পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন বিজেপির মন্ত্রীদের। তাঁর করা দাবি নিয়ে তিনি ওপেন ফোরামে মুখোমুখি হতে চান যেকোনো মন্ত্রীর, দাবি অভিষেকের। প্রয়োজনে যেকোনও সংবাদ চ্যানেলে মুখোমুখি তর্কতে তিনি বসতে চান। স্পিকার তখন তাঁকে বলেন যে, সংসদ চ্যালেঞ্জ দেওয়ার জায়গা নয়। অভিষেককে বর্তমান বিষয়ের উপরে আলোচনা করতে অনুরোধ করেন স্পিকার।

কথায় নয়, আসল পরিসংখ্যান দেখে তবেই বিশ্বাস করব, বাজেট নিয়ে কটাক্ষ চিদাম্বরমের

স্পিকারের অনুরোধ কার্যত উপেক্ষা করে পাল্টা অভিযোগ আনেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, যখন ৬০ বছর আগের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সংসদে তুলনা টানেন, তখন কেন কেউ আটকায় না? স্পিকারের বিরুদ্ধে কার্যত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন অভিষেক।

 

সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে তাঁর নিজের এবং তাঁর পরিবারের উপরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অত্যাচারের দাবি করেন অভিষেক। নিজের কেন্দ্র থেকে সর্বকালীন রেকর্ড ভোটে জেতার কথা উল্লেখ করে অভিষেকের দাবি, জনগণ তার হয়ে জবাব দিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে, গোটা দেশের সর্বকালীন রেকর্ড ৭ লক্ষ ১০ হাজার ভোটের মার্জিনে জিতেছেন অভিষেক।

 

সবমিলিয়ে সংসদের অভ্যন্তরে তৃতীয়বারের জন্য সাংসদ হয়ে যান একেবারে অন্য মেজাজে দেখা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের রাজনীতি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও অভিষেকের এই নতুন রূপ যেন শোরগোল ফেলে দিয়েছে। বাজেট নিয়ে একাধিক খামতি তুলে ধরে বিজেপিকে গত ১০ বছরের কাজের খতিয়ান নিয়ে আক্রমণ করেছেন অভিষেক। অভিষেকের এই রনংদেহি মেজাজ দেখে তারিফ করছেন বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের সমস্ত নেতারাই।

 

তাৎপর্যপূর্ণভাবে আজ যখন অভিষেক বক্তব্য রাখছিলেন, তাঁর এক পাশে ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সামনে ছিলেন সৌগত রায়। তাঁদের দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে বছরের শুরুতেই নবীন-প্রবীণ বিতর্কে কার্যত জুজুধান ছিল তৃণমূলের দুই শিবির। সংসদে যেমন এককাট্টা দেখাচ্ছে বিরোধী ব্লককে, সেরকম ভাবেই নবীন প্রবীণ মিলিয়ে দুর্দান্ত টিমগেম দেখাচ্ছে তৃণমূলও। যা আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।