ফের শিরোনামে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) খাসতালুক কাঁথি। সৌজন্যে কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না। লোকসভা ভোটের আগে অধিকারী পরিবারের হাত শক্ত করতে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সুবল কুমার মান্না! চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে শহরের অলিতে গলিতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে এমনই কথা।
মঙ্গলবার কাঁথি লোকসভার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উত্তম বারিকের সমর্থনে পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই ওয়ার্ড থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে জয়লাভ করেছিলেন সুবল। একবার নয়, টানা ৭ বার এই ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন তিনি। শেষবার ২০২২-এর পুরসভা নির্বাচনেও এই ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।
চায়ের দোকান থেকে আড্ডায় তৈরি হওয়ার জল্পনার সঙ্গে কার্যত সহমত পোষণ করেছেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিও। যদিও এই সমস্ত বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপির নেতারা।
জেলার রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা, সুবলের বিজেপি যোগদানের জল্পনা সম্ভবত আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে। কয়েক মাস আগে কাঁথির একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সুবল কুমার মান্না। একই মঞ্চে উপস্থিত হন কাঁথির বর্ষীয়ান সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারী।
Suvendu Adhikari: ‘জেলে যাচ্ছেন আরেক তৃণমূল বিধায়ক’, নাম বলে দিলেন শুভেন্দু
মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৎকালীন কাঁথি পুরসভায় পুরপ্রধান সুবল শিশিরকে ‘গুরু’ বলে সম্বোধন করেন এবং প্রণামও করেন। এর পরই রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব সুবলকে শোকজ করে। শোকজের কোনও উত্তর দেননি সুবল। এর পর পুরসভা অনাস্থা এনে সুবল কুমার মান্নাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কাঁথি পুরপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন সুপ্রকাশ গিরি।
তারপর থেকেই কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল মান্নার থেকে দূরত্ব বাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের। দলীয় নির্বাচনী কর্মসূচিতে তাঁকে আজকাল দেখা যায়নি। এদিকে লোকসভা ভোটের আগে ফোন করে তৃণমূল ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না, এমনটাই দাবি খোদ তৃণমূল নেতৃত্বর।
BJP: জামিন চাইতে গিয়েছিলেন আদালতে! বিজেপি নেত্রীকে জেলে পাঠালেন বিচারক
মঙ্গলবার বিকেলে কাঁথি পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে প্রার্থী উত্তম বারিকের সমর্থনে কর্মী সভা আয়োজন করা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন উত্তম বারিক, কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কো-মেন্টর হাবিবুর রহমান এবং ওয়ার্ডের সভাপতি শেখ হারেশ সহ তৃণমূল নেতৃত্বরা। কিন্তু ওই সভায় উপস্থিত হননি প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না।
শেখ হারেশ বলেন, সুবল কুমার মান্নাকে দল থেকে শো-কজ করা হয়েছিল। কিন্তু দল সাসপেন্ড করেনি। পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে ফোন করে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন। সংখ্যালঘু পরিবারকে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য বলছেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সভায় আসার জন্য, দলের কাজকর্ম করার জন্য। কিন্তু উনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস করবেন না, অন্য দল করবেন।
যদিও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্নাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কাঁথি সংগঠনিক বিজেপি নগর মণ্ডলের সভাপতি তথা পুরসভা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশীল দাস বলেন, এটা ওদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সুবলবাবু বিজেপিতে ভোট দিতে বলছেন কি না, সেটা আমার জানা নেই। পুরসভার ছাপ্পা দিয়ে জিতে আসা কাউন্সিলরের সমর্থন আমাদের লাগবে না।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সুবল মান্না। প্রথমে কংগ্রেসে ছিলেন। তারপর নির্দল হিসেবেই ময়দানে ছিলেন। দল শোকজ করার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। আটের দশকের আগে থেকেই ক্লাব রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুবল। ১৯৫৮ সালে জন্ম সুবল মান্নার। বাবা অচিন্ত্য মান্না রেশন ডিলার ছিলেন। পরিবারিক ওই ব্যবসা এখনও রয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকেই প্যান্ডেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
Amit Shah: বিজেপি জিতলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ৩ হাজার, বলেছিলেন শুভেন্দু, শাহ বললেন বাড়বে ১০০ করে