পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক (Bus Workers) মহলে তীব্র বিতর্কের ঝড় উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) ২১ জুলাই শহীদ দিবসের সমাবেশে অনুপস্থিত থাকার কারণে ৫০ জন বাসকর্মীকে সাসপেন্ড করার অভিযোগ নিয়ে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের উপর আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ তুলেছে।
বিজেপির দাবি, এই ঘটনা রাজ্যে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও ব্যক্তিগত পছন্দের অধিকারের উপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের প্রমাণ।বিজেপির রাজ্য শাখার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “এটাই কি গণতন্ত্র? নাকি স্বৈরতন্ত্রের নতুন চেহারা? ২১ জুলাইয়ের সভায় যায়নি বলে ৫০ জন বাসকর্মী সাসপেন্ড! একজন নাগরিকের স্বাধীন মতপ্রকাশ ও পছন্দের অধিকার আজ মমতার বাংলায় ধ্বংস!
রাজনৈতিক সভায় না গেলে চাকরি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে! সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে পরিবহন – সবাইকে বাধ্য করা হচ্ছে তৃণমূলের অনুষ্ঠানে ভিড় বাড়াতে। জেগে উঠুন, বাংলাকে বাঁচান।” এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
১৯৯৩ সালের এই দিনে, তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভোটার আইডি কার্ডের দাবিতে মহাকরণ অভিযানের আয়োজন করা হয়। সেই সময় কলকাতার রাজপথে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়, যা রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রতি বছর এই দিনটি তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মতলায় শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে, যেখানে লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনেন।
এবারের শহীদ দিবসের প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকরা ধর্মতলায় সমবেত হয়েছিলেন। তবে, এই সমাবেশে অংশ নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ৩৭ নম্বর বাস রুটের ৫০ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল সরকার জোর করে বাস তুলে নিয়ে কর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বাধ্য করছে, যা সাধারণ যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। আরামবাগ, বাঁকুড়া, বীরভূম সহ বিভিন্ন জেলায় বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় যাত্রীদের টোটো বা ম্যাজিক কারের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “এইবার একুশে জুলাইয়ে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া নেই। ১৮ জুলাই থেকে বাস তুলে নিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে যে এখনও মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু এই বাস তুলে নেওয়ার ফলে মানুষের অবস্থা শোচনীয়।”
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে খাবারে পোকা! নড়েচড়ে বসল রেল কর্তৃপক্ষ
বিজেপি এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে তারা “স্বৈরতান্ত্রিক” হিসেবে অভিহিত করেছে, যা সাধারণ মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে।
বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে পরিবহন খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তৃণমূলের জনসভায় ভিড় বাড়াতে।অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ হলেও, এটি জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিজেপি এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তবে, তৃণমূলের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো এবং জনপ্রিয়তার কারণে এই অভিযোগ কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।