অপু-দুর্গার মতো ট্রেন দেখতে গিয়ে নিখোঁজ ৪ শিশু, পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: ‘এক কাজ করবি অপু, চল যাই আমরা রেলের রাস্তা দেখে আসি…’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমার এই…

অপু-দুর্গার মতো ট্রেন দেখতে গিয়ে নিখোঁজ ৪ শিশু, পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: ‘এক কাজ করবি অপু, চল যাই আমরা রেলের রাস্তা দেখে আসি…’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমার এই বিখ্যাত দৃশ্য যেন হুবহু নেমে এল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার পদ্মপুকুর এলাকায়। ট্রেন দেখার শখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে (Kids Missing) গিয়েছিল চারটি শিশু। তবে ভাগ্য ভালো, পুলিশি তৎপরতায় মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা গেল তাদের।

ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার অন্তর্গত জালিমান্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের পদ্মপুকুর গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ি থেকে ট্রেন দেখতে রওনা দেয় তিন জন নাবালিকা ও এক জন নাবালক। সকলের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে ভেবেছিলেন, কাছাকাছি কোথাও খেলতে গিয়েছে তারা। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই যখন তারা ফেরেনি, তখন উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। রাতেই আত্মীয়-পরিজন মিলে খোঁজ শুরু হয় গোটা গ্রামে।

   

কিন্তু কোনো খোঁজ না পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ডেবরা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এরপরই সক্রিয় হয় পুলিশ। ডেবরা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। পুলিশ হাওড়া থেকে খড়গপুরগামী সমস্ত ট্রেনে ও স্টেশনে নজরদারি শুরু করে দেয়। অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাওড়া-খড়গপুর লোকাল ট্রেনে দেখা মেলে শিশুদের। তারা তখন বালিচক স্টেশনের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তাদের নিরাপদে আটক করে এবং রাতেই বাড়িতে ফিরিয়ে দেয় পরিবারের হাতে।

জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “এই উদ্ধার অভিযান ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং, তবে ডেবরা থানার পুলিশ প্রশংসনীয় কাজ করেছে। দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলেই কোনও বড় বিপদ ঘটেনি।”

এই ঘটনায় খুশি এলাকাবাসী ও নিখোঁজ শিশুদের পরিবার। তাঁরা পুলিশকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজের কাছে পুলিশের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতা আরও একবার প্রমাণিত হল বলেই মত বিশিষ্টদের।

Advertisements

স্থানীয় সমাজসেবী তথা শিক্ষক সন্দীপন মাইতি বলেন, “অপু-দুর্গার মতো করে ট্রেন দেখতে গিয়ে শিশুরা যে বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল, সেটা ভেবে শিউরে উঠছি। তবে পুলিশের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। সময় মতো হস্তক্ষেপ না করলে ঘটনা অন্য দিকে গড়াতে পারত।”

ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজে আবারও শিশুদের নিরাপত্তা ও সচেতনতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। শিশুদের একা ছেড়ে না দেওয়া, বিশেষ করে রেললাইন বা ট্র্যাক সংলগ্ন এলাকায় তাদের চলাফেরার উপর নজরদারি আরও কড়া করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা।

এই অপূর্ব মানবিক অভিযান নিঃসন্দেহে পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়াবে, আর বারবার মনে করিয়ে দেবে— বাস্তবেও এখনও আছে অনেক অপু আর দুর্গা, যাদের সুরক্ষায় সদা প্রস্তুত মানবিক মুখের পুলিশ।