বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশি হেনস্থা, মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইনেই রক্ষা পেলেন ১৬ পরিযায়ী শ্রমিক

পশ্চিম মেদিনীপুর: গুজরাটের সুরাট শহরে কাজের সন্ধানে গিয়ে বাংলাদেশি সন্দেহে চরম হেনস্থার শিকার হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা বিধানসভার অন্তর্গত গোবর্ধনপুর ও কেলেয়াড়া এলাকার ১৬…

বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশি হেনস্থা, মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইনেই রক্ষা পেলেন ১৬ পরিযায়ী শ্রমিক

পশ্চিম মেদিনীপুর: গুজরাটের সুরাট শহরে কাজের সন্ধানে গিয়ে বাংলাদেশি সন্দেহে চরম হেনস্থার শিকার হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা বিধানসভার অন্তর্গত গোবর্ধনপুর ও কেলেয়াড়া এলাকার ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant Workers)। তাঁদের অভিযোগ, হঠাৎ করে গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়, শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। সমস্ত বৈধ পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে গুজরাট পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত হয় মাত্র সাত দিন আগে, যখন ওই ১৬ জন শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে গুজরাটের সুরাটে যান। ফ্লিপকার্টের জন্য একটি মেশিন তৈরির কারখানায় তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল। দু’দিন আগেই, রাত আনুমানিক ২টা-৩টার সময় পুলিশ হঠাৎ তাঁদের ঘরে হানা দেয়। একজন শ্রমিক জানান, “পুলিশ এসে কিছু না বলেই আমাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। প্রচণ্ড মারধর করে। আমি আধার কার্ড, ভোটার আইডি দেখালাম, তবুও আমায় বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে থানায় নিয়ে যায়। অনেক রাতে ছাড়া পাই।”

   

এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। তাঁরা অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন, যা পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানের জন্য চালু করেছে রাজ্য সরকার। ফোন করার পরেই রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বর্তমানে শ্রমিকরা কোম্পানির নির্ধারিত বাসস্থানেই রয়েছেন এবং আপাতত নিরাপদ। তবে তাঁদের মানসিকভাবে এখনও আতঙ্ক রয়েছে। তাঁরা জানান, শুধুমাত্র ভাষা ও চেহারার কারণে তাঁদের উপর এই ধরণের সন্দেহ ও অত্যাচার চালানো হয়েছে। বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে মারধর করা হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

এই ঘটনায় শ্রমিকদের পরিবারও গভীর উদ্বেগে ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টোল ফ্রি হেল্পলাইনে যোগাযোগ করেই যে সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে, তাতে তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। সকলেই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

Advertisements

উল্লেখ্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে আগেই বারবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বারবার বলেছেন, ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকরা যদি কোনও সমস্যায় পড়েন, তবে রাজ্য তাঁদের পাশে থাকবে। এমনকি গত বছর পরিযায়ী শ্রমিক নিগ্রহের ঘটনায় রাজ্যের তরফে সরাসরি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের একবার সামনে এল ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি বিদ্বেষ ও বৈষম্যের চিত্র। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের হেল্পলাইন কীভাবে বাস্তবে কাজে লাগছে, সেটিও এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হল।

রাজ্য প্রশাসনের তরফে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশি হেনস্থার ঘটনাটি গুজরাট প্রশাসনের নজরে আনা হবে বলেও সূত্রের খবর।

এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে পিংলা ও আশপাশের এলাকায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল আচরণ এবং নিরাপত্তার দাবিতে স্থানীয় স্তরেও আলোচনা শুরু হয়েছে।