শুভেন্দুর ডাকে ১২ ঘণ্টার বনধ খেজুরিতে, শুনশান রাস্তা, বন্ধ দোকানপাট

খেজুরি: পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে জলসার অনুষ্ঠানে দু’জনের রহস্যমৃত্যু ঘিরে চড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ। মৃতদের পরিবার বরাবরই এটি ‘পরিকল্পিত খুন’ বলেই দাবি করে এসেছে। ঘটনায় শাসকদল…

12 hours strike in khejuri

খেজুরি: পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে জলসার অনুষ্ঠানে দু’জনের রহস্যমৃত্যু ঘিরে চড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ। মৃতদের পরিবার বরাবরই এটি ‘পরিকল্পিত খুন’ বলেই দাবি করে এসেছে। ঘটনায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের এক ব্লক সভাপতি-সহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও, এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর পুলিশের দাবি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে। তবে তাতে সন্তুষ্ট নয় পরিবার বা বিরোধীরা।

জলসার অনুষ্ঠানে মৃত্যু

ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাতে, খেজুরির ভাঙনমারিতে। স্থানীয় একটি জলসার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে মৃত্যু হয় বছর তেইশের সুজিত দাস ও পঞ্চাশোর্ধ্ব সুধীরচন্দ্র পাইক-এর। তাঁদের পরিবারের দাবি, এটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট নয়, পরিকল্পিত হত্যা। নিহত সুধীরচন্দ্র পাইকের ছেলে নন্দনকুমার পাইক বলেন, “আমার তো মনে হচ্ছে এটা মার্ডার। শরীরে একাধিক জায়গায় দাগ আছে। শুধু শক হলে এত চিহ্ন থাকবে কেন?”

   

নিহত সুজিত দাসের বাবা শশাঙ্ক দাসের অভিযোগ, “এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। থানার একেবারে লাগোয়া এলাকায় অনুমতি ছাড়াই এত বড় অনুষ্ঠান হল কীভাবে? পুলিশের নজরদারি ছিল না কেন?”

তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, থানায় নাম ১৭ জনের 12 hours strike in khejuri

ঘটনার পরে তৃণমূলের খেজুরি ২ নম্বর ব্লকের সভাপতি সমুদ্ভব দাস-সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
SDPO দিবাকর দাস জানান, “অনুষ্ঠানের সময় হ্যালোজেন লাইট পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন সুধীরচন্দ্র পাইক। তাঁকে ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন সুজিত দাসও। এটা দুর্ঘটনা।”

রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে, বনধে স্তব্ধ খেজুরি

ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার একটি ভাইরাল ভিডিও ঘিরেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, মঞ্চের সামনে হুড়োহুড়ি চলছে, কেউ ঘোষণা দিচ্ছে, “কানেকশনটা বন্ধ করো… মাটি থেকে তুলে মঞ্চে আনো!” তারপরেই বিদ্যুৎ চলে যায়। শুভেন্দুর প্রশ্ন, “শর্ট সার্কিট যদি হয়, তাহলে থানায় নিয়ে যাওয়া হল কেন? হাসপাতাল নয় কেন? মৃত বলে ঘোষণা কে করল?”

এদিন তিনি আরও বলেন, “ওরা পরিকল্পনা করে হিন্দুদের খুন করেছে। তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতারা পালিয়ে গেছে। আমরা আইনি পথে এর বিচার করব।”

Advertisements

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার ১২ ঘণ্টার খেজুরি বনধ ডাকে বিজেপি। সকাল থেকে খেজুরি কার্যত স্তব্ধ। রাস্তাঘাট ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ। মোড়ে মোড়ে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।

প্রশ্নের মুখে প্রশাসন

এত বড় জনসমাগমের অনুষ্ঠানে পুলিশি অনুমতি না থাকা, বিদ্যুৎ সংযোগের বৈধতা, আয়োজকদের দায়িত্ব, এই সব কিছু নিয়েই উঠছে একের পর এক প্রশ্ন। নিহতদের পরিবার বলছে, “শুধু দু’জনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হল? শতাধিক লোকের ভিড়ে কেউ আহত হল না? অনুষ্ঠান কমিটি পালিয়ে গেল কেন?”

তৃণমূলের পাল্টা দাবি

তৃণমূল অবশ্য সমস্ত অভিযোগকে “রাজনৈতিক চক্রান্ত” বলেই ব্যাখ্যা করেছে। তাদের দাবি, বিজেপি মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে। আইন অনুযায়ী তদন্ত চলছে।

দুই মৃত্যু নিয়ে শুরু হওয়া এই বিতর্ক এখন তীব্র রাজনৈতিক টানাপড়েনে রূপ নিয়েছে। রহস্য থেকে উত্তেজনা, এবং শোক থেকে বনধ, খেজুরি আপাতত গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে ডুবে রয়েছে।