রাজকুমার রাও এবং ওয়ামিকা গাব্বি অভিনীত ‘ভুল চুক মাফ’ (Bhool Chuk Maaf) সম্প্রতি অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে এবং এটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ফ্যান্টাসি রোমান্টিক কমেডি, যা পরিচালনা করেছেন করণ শর্মা, বারাণসীর প্রাণবন্ত পটভূমিতে একটি সময়-চক্রের (টাইম-লুপ) গল্প নিয়ে এসেছে। ছবিটির অদ্ভুত হাস্যরস, সম্পর্কযোগ্য চরিত্র এবং সামাজিক বার্তা এটিকে একটি আকর্ষণীয় পারিবারিক বিনোদন হিসেবে তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ‘ভুল চুক মাফ’-এর গল্প, হাস্যরস, অন্যান্য কমেডি হিটের সঙ্গে তুলনা এবং এক্স-এর ফ্যান প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।
Read Hindi: राजकुमार राव की ‘भूल चूक माफ’ अमेजन पर कॉमेडी धमाल!
গল্প ও হাস্যরস
‘ভুল চুক মাফ’ ছবিটি বারাণসীর রঞ্জন তিওয়ারি (রাজকুমার রাও) এবং তিতলি মিশ্রার (ওয়ামিকা গাব্বি) প্রেমকাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে। তিতলির বাবা (জাকির হুসেন) রঞ্জনের জন্য একটি শর্ত রাখেন—তাকে দুই মাসের মধ্যে একটি সরকারি চাকরি জোগাড় করতে হবে। চাকরি পাওয়ার জন্য রঞ্জন একটি ‘জুগাড়’-এর পথ বেছে নেন এবং ভগবান দাসের (সঞ্জয় মিশ্র) সাহায্যে তিনি সফল হন। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তিনি ভুলে যান একটি পবিত্র প্রতিজ্ঞা, যা তাকে হলদি অনুষ্ঠানের দিনে একটি সময়-চক্রে আটকে দেয়। এই অদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রঞ্জনের হাস্যকর প্রচেষ্টা ছবিটির মূল আকর্ষণ।
ছবিটির হাস্যরস বারাণসীর স্থানীয় সংস্কৃতি, স্থানীয় উচ্চারণ এবং দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ঘটনা থেকে উৎসারিত। রঞ্জনের হতাশা, তিতলির দুষ্টুমি, এবং সঞ্জয় মিশ্র ও সীমা পাহওয়ার মতো পার্শ্বচরিত্রের কৌতুকপূর্ণ অভিনয় দর্শকদের হাসির খোরাক জোগায়। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা দৈর্ঘ্য বোধ হয় এবং কিছু দৃশ্য পুনরাবৃত্তিমূলক মনে হয়, তবুও ছবিটির হৃদয়গ্রাহী সমাপ্তি এবং সামাজিক বার্তা এটিকে একটি মজাদার অভিজ্ঞতা করে তোলে। ছবিটি ভারতের বেকারত্ব সমস্যা এবং ‘জুগাড়’ সংস্কৃতির উপর হালকা কিন্তু তীক্ষ্ণ মন্তব্য করে, যা এটিকে সম্পর্কযোগ্য করে তোলে।
অন্যান্য কমেডি হিটের সঙ্গে তুলনা
‘ভুল চুক মাফ’-এর গল্প এবং শৈলী রাজকুমার রাও-এর পূর্ববর্তী ছবি ‘বরেলি কি বরফি’ এবং ‘স্ত্রী’-এর সঙ্গে তুলনীয়। ‘বরেলি কি বরফি’ যেমন ছোট শহরের প্রেম ও হাস্যরসের মিশ্রণ ছিল, তেমনই ‘ভুল চুক মাফ’ও বারাণসীর পটভূমিতে একটি হালকা-ফুলকা গল্প বলে। তবে, ‘স্ত্রী’ বা ‘স্ত্রী ২’-এর মতো ভৌতিক হাস্যরসের পরিবর্তে এটি সময়-চক্রের ধারণা ব্যবহার করে, যা হলিউডের ‘গ্রাউন্ডহগ ডে’ (১৯৯৩)-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অয়ুষ্মান খুরানার ‘ড্রিম গার্ল’ বা ‘বালা’-এর মতো ছবির সঙ্গেও এটির মিল রয়েছে, যেখানে ছোট শহরের জীবন এবং সামাজিক সমস্যাগুলি হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। তবে, ‘ভুল চুক মাফ’-এর দ্বিতীয়ার্ধে হাস্যরসের অভাব এবং কিছুটা দুর্বল স্ক্রিপ্ট এটিকে ‘হেরা ফেরি’ বা ‘গোলমাল’-এর মতো ক্লাসিক কমেডি হিটের সমকক্ষ করে তোলে না।
এক্স-এ ফ্যান প্রতিক্রিয়া
এক্স প্ল্যাটফর্মে ‘ভুল চুক মাফ’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কিছু দর্শক ছবিটির হৃদয়গ্রাহী গল্প এবং রাজকুমার রাও-এর অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “#BhoolChukMaaf একটি হাস্যকর ও আবেগপ্রবণ রোলারকোস্টার। রাজকুমার রাও এবং ওয়ামিকা গাব্বি দারুণ অভিনয় করেছেন। ওটিটি-তে দেখার মতো!” (@RishirajNa90620 )। তবে, অনেকে ছবিটির দুর্বল স্ক্রিপ্ট এবং জোর করে হাস্যরস ঢোকানোর প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “#BhoolChukMaaf একটি অত্যন্ত দুর্বল ছবি। হাসির কোনো দৃশ্য নেই, সংলাপ পুরনো। রাজকুমার রাও-এর অভিনয়ও একঘেয়ে লাগে।” (@SumitkadeI)। কেউ কেউ ছবিটিকে ‘টাইমপাস’ বলে মন্তব্য করেছেন, যেমন, “কমেডি হিসেবে খুব বেশি মজার না হলেও একবার দেখা যায়।” (@Zohaib4sweety)।
অভিনয় ও প্রযোজনা
রাজকুমার রাও তার স্বাভাবিক কৌতুকপূর্ণ অভিনয় দিয়ে রঞ্জনের হতাশা এবং আশাবাদকে জীবন্ত করে তুলেছেন। ওয়ামিকা গাব্বি তিতলির চরিত্রে একটি প্রাণবন্ত উপস্থিতি দেখিয়েছেন, যদিও তার চরিত্রের গভীরতা কিছুটা কম। সীমা পাহওয়া, সঞ্জয় মিশ্র, এবং রঘুবীর যাদবের মতো অভিনেতারা তাদের স্বল্প স্ক্রিন টাইমেও ছবিটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। ম্যাডক ফিল্মস এবং অ্যামাজন এমজিএম স্টুডিওর প্রযোজনায় ছবিটি বারাণসীর সংস্কৃতি ও পরিবেশকে সুন্দরভাবে ধরেছে, যদিও সিনেমাটোগ্রাফি কিছুটা পুনরাবৃত্তিমূলক। তানিষ্ক বাগচীর সঙ্গীত মাঝারি, তবে ‘চোর বাজারি’ গানটি দর্শকদের মনে দাগ কাটে।
বক্স অফিস ও ওটিটি সাফল্য
‘ভুল চুক মাফ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর প্রথম দিনে ৭.২০ কোটি টাকা আয় করে এবং তিন সপ্তাহে মোট ৮৭.৩৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে, যা ৫০ কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় একটি বাণিজ্যিক সাফল্য। অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তির পর এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, বিশেষ করে হালকা-ফুলকা কমেডি পছন্দকারী দর্শকদের কাছে।
‘ভুল চুক মাফ’ একটি মজাদার এবং সম্পর্কযোগ্য কমেডি-ড্রামা, যা বারাণসীর স্থানীয় স্বাদ এবং রাজকুমার রাও-এর দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য দেখার মতো। যদিও এটি ‘হেরা ফেরি’ বা ‘গোলমাল’-এর মতো কালজয়ী কমেডি নয়, তবুও এটি একটি পারিবারিক বিনোদন হিসেবে উপযুক্ত। অ্যামাজন প্রাইমে এটি এখন স্ট্রিমিং হচ্ছে, তাই এই উইকেন্ডে পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করুন এই হাসির গল্প।