সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে বড় পদক্ষেপ, টাটা ইলেকট্রনিক্স ও মার্কের চুক্তি

ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল টাটা ইলেকট্রনিক্স (Tata Electronics) প্রাইভেট লিমিটেড এবং জার্মানির শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থা Merck।…

Tata Electronics, Merck sign MoU to boost semiconductor materials and infra in India

ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল টাটা ইলেকট্রনিক্স (Tata Electronics) প্রাইভেট লিমিটেড এবং জার্মানির শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থা Merck। দুই প্রতিষ্ঠান একটি সমঝোতা স্মারক (MoU)-তে স্বাক্ষর করেছে, যা দেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে অবকাঠামো, উপকরণ সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ গড়ে তুলতে একটি বড় মাইলফলক হতে চলেছে।
এই কৌশলগত সহযোগিতার অধীনে মার্ক টাটা ইলেকট্রনিক্সকে তার পূর্ণ পোর্টফোলিও পরিষেবা দেবে। এর মধ্যে রয়েছে—

উচ্চ মানের ইলেকট্রনিক উপকরণ, আধুনিক গ্যাস ও কেমিক্যাল ডেলিভারি সিস্টেম, টার্নকি ফ্যাব অবকাঠামো সেবা, Material Intelligence™ প্ল্যাটফর্ম, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা চালিত। এই সুবিধাগুলো সরাসরি ব্যবহার করা হবে টাটা ইলেকট্রনিক্সের আসন্ন সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব প্রকল্পে, যা গুজরাটের ধোলেরা-তে নির্মিত হচ্ছে।

   

Merck তাদের Athinia® নামক সুরক্ষিত ডেটা অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্মও উন্মুক্ত করবে, যা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিভিন্ন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে তথ্য বিনিময়কে নিরাপদ ও কার্যকর করে তুলবে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিশ্বমানের নিরাপত্তা প্রোটোকল, উৎপাদন উৎকর্ষ এবং প্রক্রিয়া অপ্টিমাইজেশনের অভিজ্ঞতা ভারতের বাজারে ভাগ করে নেবে।

চুক্তির অন্যতম মূল দিক হলো স্থানীয় পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন উন্নয়ন। এর মধ্যে রয়েছে—
স্থানীয় গুদামজাতকরণ সুবিধা, কাঁচামালের সরবরাহ চেইন গড়ে তোলা, দক্ষ জনশক্তি বা ট্যালেন্ট পুল তৈরি, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শিল্প প্রক্রিয়া ও মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করা।
এর ফলে শুধুমাত্র টাটা ইলেকট্রনিক্স নয়, ভারতের সমগ্র সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেম শক্তিশালী হবে।

টাটা ইলেকট্রনিক্সের সিইও ও এমডি ড. রণধীর ঠাকুর বলেন, “Merck-এর সাথে এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব আমাদের জন্য শুধু উন্নত প্রযুক্তি আনার সুযোগ নয়, বরং নিরাপত্তা ও উৎপাদন মানদণ্ডের ক্ষেত্রে একটি বৈশ্বিক মান গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। Merck-এর অভিজ্ঞতা ও ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে আমরা ধোলেরা ফ্যাবের সফল বাস্তবায়ন দ্রুত করতে পারব এবং একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেম তৈরি করব।”

অন্যদিকে Merck-এর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য ও সিইও (ইলেকট্রনিক্স) ড. কাই বেকমান মন্তব্য করেন, “টাটা ইলেকট্রনিক্সের সাথে এই সহযোগিতা আমাদের দীর্ঘদিনের কৌশলগত ভিশনের প্রতিফলন। নিরাপত্তা, নিখুঁততা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা ভারতের সেমিকন্ডাক্টর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চাই।”

ভারত সরকারের India Semiconductor Mission (ISM) দেশের প্রযুক্তি খাতে আত্মনির্ভরতা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। টাটা ইলেকট্রনিক্স ও Merck-এর এই MoU সেই লক্ষ্য পূরণের এক বড় ভিত্তি।

Advertisements

ধোলেরার সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব প্রকল্পে টাটা ইলেকট্রনিক্স প্রায় ৯১,০০০ কোটি টাকা (১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করছে। এটি ভারতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব, যা আগামী দিনে অটোমোবাইল, মোবাইল ফোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবহৃত চিপ উৎপাদন করবে।

প্রকল্পটির নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই এটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছে। Merck-এর মত অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের যোগদান এই ফ্যাবকে শুধু ভারতের নয়, বৈশ্বিক মানচিত্রে একটি প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অংশীদারিত্ব ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালু চেইনে একটি বড় পরিবর্তন আনবে। এশিয়ার মধ্যে চীন, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাব যেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত, সেখানে ভারত এখন একটি বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসার সম্ভাবনা পাচ্ছে।

Merck-এর decades-long সেমিকন্ডাক্টর উপকরণ সরবরাহ ও সেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা ভারতের শিল্পখাতকে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এই MoU কেবল একটি বাণিজ্যিক চুক্তি নয়, বরং ভারতের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, আগামী কয়েক বছরে এই ফ্যাব চালু হলে শুধু দেশীয় চাহিদা মেটানোই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারত একটি বড় সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে।

টাটা ইলেকট্রনিক্স ও Merck-এর যৌথ উদ্যোগে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রযুক্তি, উপকরণ এবং মানবসম্পদ সবকিছুই ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছে। এই সহযোগিতা ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি মানচিত্রে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করার পথে একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দিল।