সিকিউরিটিজ বাজারে এনআরআই অংশগ্রহণ বাড়াতে কেওয়াইসি সংস্কারে সেবির নতুন উদ্যোগ

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI) এনআরআই বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কেওয়াইসি (Know Your Customer) প্রক্রিয়ায় বড় সংস্কারের ইঙ্গিত দিল। সংস্থার চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে শনিবার…

SEBI New 2025-2026 Deadline for Missed Physical Share Transfers

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI) এনআরআই বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কেওয়াইসি (Know Your Customer) প্রক্রিয়ায় বড় সংস্কারের ইঙ্গিত দিল। সংস্থার চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে শনিবার মুম্বাইয়ে আয়োজিত BFF Capital Market Confluence 2025 অনুষ্ঠানে জানান, বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য আরও সহজ, নিরাপদ এবং প্রযুক্তিনির্ভর কেওয়াইসি প্রক্রিয়া তৈরি করা এখন সেবির অন্যতম অগ্রাধিকার।

Advertisements

কেওয়াইসি প্রক্রিয়ায় নতুন দিশা

সেবি প্রধান বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই কেওয়াইসি নীতিমালা অনেকটাই সরল করেছি এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই বিনিয়োগকারীরা লেনদেন শুরু করতে পারছেন। তবে এনআরআই বিনিয়োগকারীদের জন্য কেওয়াইসি অ্যাক্সেস এখনো যথেষ্ট ঝামেলামুক্ত নয়। তাই তাদের জন্য আলাদা করে একটি প্রযুক্তি-সক্ষম সহজ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে।”

Advertisements

এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বিদেশে থাকা ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা যেন ভারতের সিকিউরিটিজ বাজারে সহজে প্রবেশ করতে পারেন এবং কোনো অপ্রয়োজনীয় জটিলতার মুখে না পড়েন।

বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার গুরুত্ব

অনুষ্ঠানে তুহিন কান্ত পাণ্ডে ভারতের বাজারে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার ঘাটতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি একটি সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরেন—

  • ৬৩% পরিবার সিকিউরিটিজ পণ্যের বিষয়ে অবগত।

  • কিন্তু সক্রিয় অংশগ্রহণ মাত্র ৯.৫%।

  • শহুরে এলাকায় অংশগ্রহণের হার ১৫%, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ৬%।

  • মাত্র ৩৬% বিনিয়োগকারী সিকিউরিটিজ মার্কেট সম্পর্কে উচ্চ বা মাঝারি স্তরের জ্ঞান রাখেন।

তিনি বলেন, “শক্তিশালী ও টেকসই বাজার গড়তে হলে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা এবং তাঁদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।”

প্রযুক্তি ও বাজার অবকাঠামো

সেবি প্রধান ভারতের সিকিউরিটিজ বাজারের প্রযুক্তিগত বিস্তার সম্পর্কেও কথা বলেন। তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে ১,৬০০ কোটি বার্তা প্রক্রিয়া হয় দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে। চূড়ান্ত অবস্থায় এই সংখ্যা ২,৯০০ কোটি ছুঁয়েছে। এই বিপুল কার্যক্রমের পেছনে কোটি কোটি বিনিয়োগকারীর আস্থা কাজ করছে, যা বজায় রাখা ও সুরক্ষিত রাখাই সেবির প্রধান দায়িত্ব।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে অ্যালগরিদমিক ও হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং ইক্যুইটি ও ডেরিভেটিভ মার্কেটে বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। তাই বাজারকে স্বচ্ছ, ন্যায্য ও স্থিতিশীল রাখতে সেবি নিয়মিত প্রযুক্তিগত কাঠামো ও ট্রেডিং নিয়মাবলি হালনাগাদ করছে।

সাইবার নিরাপত্তায় জোর

সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক করেছেন তুহিন কান্ত পাণ্ডে। তাঁর বক্তব্য— “কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর সাইবার আক্রমণ পুরো বাজার ব্যবস্থাকে নাড়া দিতে পারে। তাই সাইবার-সিকিউরিটি এখন আমাদের জন্য অন্যতম অগ্রাধিকার।”

এই প্রেক্ষিতে সেবি একটি বিস্তৃত সাইবার-সিকিউরিটি ও সাইবার-রেজিলিয়েন্স ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছে। এর আওতায়—

    • বাজার অবকাঠামো সংস্থাগুলির (MIIs) সঙ্গে সমন্বয় করে স্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে।

    • লাইভ ডিজাস্টার রিকভারি ড্রিলের মাধ্যমে সংস্থাগুলিকে স্ট্রেস টেস্ট করা হচ্ছে।

    • ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট আউটেজ রোধে রেডান্ডেন্সি মডেল ও অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, SEBI-র নতুন উদ্যোগ ভারতের সিকিউরিটিজ বাজারকে আরও নিরাপদ ও বিনিয়োগবান্ধব করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে এনআরআই বিনিয়োগকারীদের জন্য কেওয়াইসি সহজ হলে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সাইবার সুরক্ষা—সব মিলিয়ে ভারতের সিকিউরিটিজ বাজার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।