ধর্ম অবমাননা অভিযোগে বাংলাদেশের (Bangladesh) এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা ও তার গ্রেফতারির প্রতিবাদে দেশটির সুশীল ও যুত্তিবাদীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাহিত্যিক ডক্টর জাফর ইকবালের দাবি, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল নামে যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননা অভিযোগ আনা হয়েছে তা হাস্যকর। প্রতিবাদে তিনি বলেন, আমাকেও গ্রেফতার করা হোক।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টানা ১৭ দিন জেলে তিনি। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পড়ানোর সময় ধর্মকে অবমাননা করেন। সেই বক্তব্য পড়ুয়ারা গোপনে মোবাইলে রেকর্ড করে। পরে সমাজিক মাধ্যমে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে হুমকি আসতে থাকে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে সব জানান। তদন্তের স্বার্থে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুরো ঘটনার পর্দা ফাঁস করেছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। ঘটনার দিন স্কুলে যা ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে এরকম খবর পেয়ে আমি সেই স্কুলে খবর সংগ্রহ করতে যাই। স্কুলের ভেতর পড়ুয়ারা বিভিন্ন স্থানে জটলা করে দাঁড়িয়েছিল। বহিরাগত ছিল অনেক।
ওই সাংবাদিক জানান, আমি কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তারা জানায়, নবী ও ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছে তাদের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তারা আমাকে বলছিল, বিজ্ঞান আগে না ধর্ম আগে, বিজ্ঞান আর ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষক ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তবে ১০ জনের সঙ্গে কথা বললেও একজনও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি তাদের স্যার আসলে কী বলেছেন। এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে শিক্ষককে অপমান করার চেষ্টা হয় বলে জানান ওই সাংবাদিক।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই সাংবাদিক বলেন, স্কুলে দেখতে পাই কিছু পড়ুয়া জুতোর মালা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। যে বানিয়ে এনেছে তার স্কুল ইউনিফর্ম ছিল না। সেই মূলত উস্কানি দিয়েছে। এরপর সেখানে পুলিশ আসে। পুলিশ সবাইকে মাঠের সামনে একত্রিত করে বোঝানোর চেষ্টা করে। এএসপি তখন বলেন, তোমরা শান্ত হও, এ ঘটনা আমরা দেখছি। তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও। আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারো। দুই জন বহিরাগত ব্যক্তি এমন সময় ছাত্রদের উসকে দিয়ে বলেছে, তোরা পুলিশের কথা শুনবি না। জুতোর মালা পরে ঘুরাতেই হবে।
শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেন, ঘটনার দিন আমি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলাম। আমার ছেলে ফোন করে জানায়, অনেক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করেছে। তারা দরজা ধাক্কাচ্ছিল। ওরা তার বাবাকে গালিগালাজ করছিল। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলাউদ্দিন আহম্মেদ ঘটনা দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এসএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার পর কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসে। তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল আমাদের মহানবী হজরত মহম্মদ কে নিয়ে কটূক্তি করেছে। ছাত্ররা তার শাস্তি চায়। তখন আমি তাদের বলি, শিক্ষক যদি এ রকম কিছু বলে থাকে তাহলে শাস্তি হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ফেরত পাঠিয়ে দিই। কিছুক্ষণ পর তারা স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ শুরু করে, সেখানে স্থানীয়রাও ছিল। পরে মাইকিং করে বহিরাগতদের স্কুল মাঠ ত্যাগ করতে বলা হয়। তবে তা না হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে ভেবে পুলিশকে খবর দিই।