Sandhya Mukherjee: কানে কানে রূপকথা কয়…সন্ধ্যা কণ্ঠে মেশিনগান ঘুমাতো মুক্তিযোদ্ধাদের কোলে

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: এ লগন গান শোনাবার..স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শুনছেন বিশেষ অনুষ্ঠান… মেশিনগান হাতে রাখা গেরিলারা রেডিওর নব ঘোরানো বন্ধ করে দিলেন। হাতের মেশিনগান…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: এ লগন গান শোনাবার..স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শুনছেন বিশেষ অনুষ্ঠান… মেশিনগান হাতে রাখা গেরিলারা রেডিওর নব ঘোরানো বন্ধ করে দিলেন। হাতের মেশিনগান শুয়ে পড়ল কোলে। দূরে বাঁশ বাগানের মাথায় চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছিল। অন্ধকারে জেগে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা শুনছিলেন সন্ধ্যা (Sandhya Mukherjee) কণ্ঠ।

বিশ্বের অন্যতম আলোচিত গেরিলা রেডিও সার্ভিসের তরঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আরতি মুখার্জির কণ্ঠ। পঞ্চাশ বছর আগের সেই মুহূর্ত গুলো চিরন্তন হয়ে থাকবে।

কলকাতায় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াত। এই সংবাদ এক লহমায় বিশ্বজনীন বাঙালিকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রয়াণ সংবাদে বাকরুদ্ধ বাংলাদেশের সংস্কৃতি মহল। পশ্চিমবঙ্গ, শিলচর, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ ছাড়া প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে নেমেছে সন্ধ্যা তারা।

পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হয়ে পঞ্চাশ বছর আগে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। সেই যুদ্ধে সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট থেকে এক সৈনিক সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু । সেই উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়াতে গণ আন্দোলনে যোগ দেন তিনি।গান গেয়ে সংগ্রহ করেন অর্থ। সেই অর্থ তিনি তুলে দিয়েছিলেন উদ্বাস্তুদের কল্যাণে। তিনি অর্থ সাহায্য করেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের এবং গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা।

কলকাতায় স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য স্থাপনেও অর্থ সাহায্য করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির উপলক্ষে তিনি গেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’। সেই গান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। বাংলাদেশও ভুলে যায়নি তার অবদান | বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন প্রধান শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম | তিনি কিংবদন্তি গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় |

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর কলকাতার ঢাকুরিয়াতে । প্রয়াত হলেন ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।