বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সান্ত্বনার জয়, সালমান-ফারহানের দাপটেও সিরিজ হাতছাড়া

শের-ই-বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ২৪ জুলাই, ২০২৫, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তান ৭৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেলেও সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ (Bangladesh…

Pakistan's Win But Bangladesh Take T20I Series

শের-ই-বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ২৪ জুলাই, ২০২৫, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তান ৭৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেলেও সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ (Bangladesh vs Pakistan)। পাকিস্তানের পেসার সালমান মির্জা এবং ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান এই ম্যাচে দলের জয়ের পথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে, প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের দাপটের কাছে নতিস্বীকার করায় সিরিজ জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে পাকিস্তানের।

ম্যাচের হাইলাইটস
ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। পাকিস্তানের ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান এবং সাইম আইয়ুব দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন। ফারহান ৪১ বলে ৬৩ রানের একটি আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল পাঁচটি ছক্কা এবং ছয়টি চার। তিনি ফখর জামানের পরিবর্তে দলে এসে সাইম আইয়ুবের (২১ রান) সঙ্গে ৮২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। এই জুটি পাকিস্তানকে পাওয়ারপ্লে-তে ৫৭/০-এ পৌঁছে দেয়।

   

মাঝের ওভারগুলোতে বাংলাদেশের বোলাররা কিছুটা ফিরে আসে। স্পিনার নাসুম আহমেদ ১২তম ওভারে ফারহানকে আউট করে পাকিস্তানের রানের গতি কিছুটা কমিয়ে দেন। নাসুম তাঁর চার ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। পেসার তাসকিন আহমেদ ৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেন। তবে, মোহাম্মদ নওয়াজের ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস এবং হাসান নওয়াজের ১৭ বলে ৩৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস পাকিস্তানকে শেষ পাঁচ ওভারে ৪৬ রান যোগ করতে সাহায্য করে। ফলে, পাকিস্তান ২০ ওভারে ১৭৮/৭ রানের একটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে।

বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস শুরু হতেই সালমান মির্জার আগুনে বোলিং তাদের টপ-অর্ডারকে ধ্বংস করে দেয়। মির্জা, যিনি এটি তাঁর তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছিলেন, ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তানজিদ হাসানকে শূন্য রানে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট করেন। এই আঘাত বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামায়। মির্জা তাঁর চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন, যার মধ্যে শামিম হোসেনের উইকেটও ছিল। ফাহিম আশরাফ ১৩ রানে ২ উইকেট এবং মোহাম্মদ নওয়াজ শেষ দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচটি জয় নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ ১৬.৪ ওভারে মাত্র ১০৪ রানে অলআউট হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন অপরাজিত ৩৫ রান করলেও তাঁর এই প্রচেষ্টা দলকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। মোহাম্মদ নঈম ১০ রান করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন, বাকি কোনও ব্যাটার দুই অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেননি।

সিরিজের প্রেক্ষাপট
প্রথম দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করেছিল। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান ১১০ রানে অলআউট হয়ে ৭ উইকেটে হারে, যেখানে তাসকিন আহমেদ এবং মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তাদের ধ্বংস করেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান ১২৫ রানে থামে এবং বাংলাদেশ ৮ রানে জয় পায়। এই দুটি ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং বাংলাদেশের বোলিং দক্ষতা স্পষ্ট ছিল। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পাঁচজন প্রধান খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের সুযোগ দেয়, যার মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন। এই পরিবর্তন সত্ত্বেও, তারা সিরিজ জয় ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

Advertisements

অধিনায়কদের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আঘা ম্যাচের পর বলেন, “আমি আমার দলের জন্য খুব গর্বিত। আমরা যে পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন, আমরা চরিত্র দেখাতে চাই।” তিনি ফারহান, সাইম এবং নওয়াজের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস তাঁর দলের সিরিজ জয়ের জন্য গর্ব প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়টা দারুণ।” তিনি গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাদের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কথাও উল্লেখ করেন।

পুরস্কার এবং প্রভাব
সাহিবজাদা ফারহান তাঁর ৬৩ রানের ঝকঝকে ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তবে, সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান বাংলাদেশের জাকের আলি, যিনি পুরো সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। সালমান মির্জা তাঁর তিন ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের বোলিংয়ে নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছেন। তাঁর গতি এবং নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার জন্য আশাব্যঞ্জক।

পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ
পাকিস্তানের জন্য এই সিরিজে ব্যাটিং ব্যর্থতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে তাদের ব্যাটিং ইউনিট ধসে পড়ে, যা অধিনায়ক সালমান আঘাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যাটিং উইকেট সাধারণত চ্যালেঞ্জিং, তবে দলকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তৃতীয় ম্যাচে ফারহানের ব্যাটিং এবং মির্জার বোলিং দলের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে। আগামী এশিয়া কাপ ২০২৫ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬-এর প্রস্তুতির জন্য পাকিস্তানকে তাদের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা আনতে হবে।

বাংলাদেশের সাফল্য
বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজ জয় তাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রমাণ। গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। তবে, তৃতীয় ম্যাচে তাদের ব্যাটিং ধস তাদের দুর্বলতাও উন্মোচন করেছে। আগামী ম্যাচগুলোতে তাদের ব্যাটিং ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

সালমান মির্জা এবং সাহিবজাদা ফারহানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পাকিস্তানকে সান্ত্বনার জয় এনে দিলেও, বাংলাদেশের সামগ্রিক আধিপত্য সিরিজে স্পষ্ট ছিল। এই সিরিজ উভয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে, বিশেষ করে আগামী এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে।