তিয়ানজিন SCO সম্মেলনে বৈঠকে বসছেন মোদি ও পুতিন

মস্কো: আগামী সোমবার সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনের ফাঁকে চীনের তিয়ানজিন শহরে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (PM Modi-Putin)।…

মস্কো: আগামী সোমবার সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনের ফাঁকে চীনের তিয়ানজিন শহরে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (PM Modi-Putin)। শুক্রবার ক্রেমলিনের বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আগস্টের ৩১ তারিখ থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিতব্য SCO শীর্ষ সম্মেলনে দুই নেতা অংশ নেবেন।

উশাকভ বলেন, “SCO প্লাস বৈঠকের পর (১ সেপ্টেম্বর) আমাদের প্রেসিডেন্ট ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।” এটি চলতি বছরের তাদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হলেও দুই দেশের রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।

   

ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ‘বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ (Special Strategic Partnership)-এর ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। উশাকভ মনে করিয়ে দেন যে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এই অংশীদারিত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। সেই হিসেবে ২০২৫ সালে এই ঐতিহাসিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের ১৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই বৈঠকে শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার নয়, ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফরের প্রস্তুতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।

বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাঝেই ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আগের মতোই দৃঢ় রয়েছে। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের সহযোগিতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষত, রাশিয়া এখনও ভারতের প্রধান প্রতিরক্ষা সরবরাহকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে সস্তা ক্রুড অয়েল আমদানির জন্য ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে।

SCO সম্মেলনে এই বছরের আলোচ্যসূচি হিসেবে সদস্য দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল নিয়ে আলোকপাত করা হবে। চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলি এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সদস্য। তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে কারণ বৈশ্বিক উত্তেজনার মাঝে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে কৌশলগত ঐক্যের বার্তা দেওয়া হবে।

Advertisements

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদি-পুতিন সাক্ষাৎ শুধু আনুষ্ঠানিক বৈঠক নয়, বরং এটি আগামী কয়েক বছরের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রূপরেখা তৈরি করতে পারে। ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করার সুযোগ তৈরি হবে এই বৈঠকের মাধ্যমে। অন্যদিকে, রাশিয়া ভারতের বাজারে বিনিয়োগ এবং কৌশলগত প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহী।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সম্মেলনের ফাঁকে অন্যান্য SCO সদস্য দেশগুলির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বিশেষত, ভারত-চীন সম্পর্ক, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

তিয়ানজিনের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এখন ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের দিকে। ডিসেম্বরের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে এই আলোচনা নতুন দিকনির্দেশ দেবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News