নজিরবিহীন আর্থিক সঙ্কট সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় রবিবার রাতেই পদত্যাগ করেছে শ্রীলঙ্কা মন্ত্রিসভা। এরই মধ্যে সোমবার দেশের এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের ডাক দিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
সোমবার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দেশ এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কট থেকে শ্রীলঙ্কাবাসীকে স্বস্তি দিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এগিয়ে আসা উচিত। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সদস্য মিলে এক নতুন সরকার গঠন করা হোক। সেই সরকার চলতি পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করুক।
শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি প্রতিদিনই খারাপ থেকে খারাপ তর হচ্ছে। সোমবার সে দেশের শেয়ারবাজার খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এদিন শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত প্রতিটি সংস্থার শেয়ার সূচক হু হু করে পড়তে থাকে। চলতি ঘটনার জেরে এদিন পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর অজিথ নিভার্ড কারভাল।
দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। বিক্ষোভ যত বাড়ছে ততই বাড়ছে বিধি-নিষেধ। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। তাঁরা বলেছেন, সেনাবাহিনীর হাতে যেভাবে ঢালাও ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত বিপদজনক।
দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি জোট সরকার গঠনের প্রক্রিয়া যাতে মসৃণ হয় সেজন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রী তথা আর এক ভাই বাসিল রাজাপাকসে কে সরিয়ে দিয়েছেন। তবে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পরিবারতন্ত্র চালানোর অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। কারণ রাজাপক্ষে পরিবারের পাঁচ সদস্য শ্রীলঙ্কা মন্ত্রিসভার সদস্য।
শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলনেতা সাজিথ প্রেমদাসা বলেছেন, এই সরকার দেশ চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকারের ভুল নীতির জন্যই দেশ চরম সঙ্কটের মুখে পড়েছে। রাজাপক্ষে সরকার কার্যত মানুষকে বোকা বানিয়েছে। অবিলম্বে এই সরকারকে ছুড়ে ফেলা দরকার। তবে শুধু দেশে নয়, রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশেও চলছে বিক্ষোভ। লন্ডন, নিউইয়র্ক, হেলসিঙ্কির মত একাধিক শহরে শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূতরা সে দেশের দূতাবাসের সামনে রাজাপক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ। পরিবারকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে গোটা দেশকে ডুবিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও তাঁর ভাই তথা প্রধানমন্ত্রী ও মাহিন্দ্রা।
মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগ করায় প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে চারজন মন্ত্রীকে আপাতত দেশ চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। গোতাবায়া বলেছেন, নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই চারজনই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। ভাই তথা অর্থমন্ত্রী বাসিলকে সরিয়ে দেওয়ার পর দেশের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানোর জন্য আলি সাবরেকে নিয়োগ করেছেন গোতাবায়া। ।