নতুন বাড়ি কেনার সেরা সময়, LIC কমাল সুদের হার

এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্স (LIC Housing Finance) ৩৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা নতুন গৃহঋণে সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে।…

RBI’s Rate Cut Boost Affordable Housing Demand

এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্স (LIC Housing Finance) ৩৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা নতুন গৃহঋণে সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। এর ফলে ১৯ জুন থেকে নতুন গৃহঋণের সুদের হার শুরু হবে মাত্র ৭.৫০ শতাংশ থেকে। এই পদক্ষেপে দেশের আবাসন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

সুদের হার কমানোর পেছনের প্রেক্ষাপট:
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (RBI)–এর মনেটারি পলিসি কমিটি (MPC) রেপো রেট কমিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্স তাদের সুদের হার কমানোর ঘোষণা করেছে। সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ত্রিভুবন অধিকারী বলেছেন,
“আমাদের ৩৬তম প্রতিষ্ঠা দিবসে আমরা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলাম যা গৃহঋণ প্রার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক হবে। রেপো রেট কমার পর আমরা চাই এর সুফল সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে।”

   

কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমানে ভারতের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার, যাদের স্বপ্ন নিজস্ব বাড়ির মালিক হওয়া। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং উচ্চ আবাসনমূল্য এই স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্সের এই সিদ্ধান্তে গৃহঋণের EMI কমবে এবং গৃহঋণ গ্রহণের ঝোঁক বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে যাঁরা নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক খবর।
ত্রিভুবন অধিকারী আরও বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এই পদক্ষেপ আবাসন খাতে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসবে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও সাশ্রয়ী হাউজিং সেগমেন্টে। এটাই আমাদের লক্ষ্য—ঘর কেনাকে আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী করে তোলা।”

অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলোর সুদের হারেও পরিবর্তন:
এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্সের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সুদের হার কমাতে শুরু করেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (SBI) সম্প্রতি তাদের রেপো লিংকড লেন্ডিং রেট (RLLR) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। এখন SBI-র RLLR দাঁড়িয়েছে ৭.৭৫ শতাংশে এবং এক্সটারনাল বেঞ্চমার্ক বেসড লেন্ডিং রেট (EBLR) কমে হয়েছে ৮.১৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৮.৬৫ শতাংশ। এই পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে ১৫ জুন থেকে।
এই সিদ্ধান্তগুলোর ফলে সাধারণ ঋণগ্রহীতারা সুবিধা পাবেন। গৃহঋণ, শিক্ষা ঋণ, গাড়ির ঋণ—সব ক্ষেত্রেই সুদের হার কমে যাবে, যার ফলে আর্থিক বোঝা কিছুটা হালকা হবে।

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হতে পারে?
1. আবাসন খাতে চাহিদা বৃদ্ধি:
সুদের হার কমার ফলে EMI কমবে। এটি বাড়ি কেনার ইচ্ছুকদের জন্য একটি বড় সুবিধা, বিশেষ করে যারা প্রথমবার গৃহঋণ নিচ্ছেন।
2. নির্মাণ শিল্পে গতি আসবে:
বাড়ি কেনার প্রবণতা বাড়লে নির্মাণ শিল্পেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফ্ল্যাট বিক্রি বাড়বে, ফলে ডেভেলপারদের ব্যবসাও বাড়বে।
3. অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব:
আবাসন খাত সরাসরি ও পরোক্ষভাবে বহু খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। ইট, বালি, সিমেন্ট থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক্যাল ও ফার্নিশিং পর্যন্ত—সব খাতে চাহিদা বাড়বে।
4. সাশ্রয়ী হাউজিংয়ে উৎসাহ:
সরকারের ‘হাউজিং ফর অল’ প্রকল্পে গতি আসতে পারে এই পদক্ষেপে। কম সুদের হার গৃহঋণ গ্রহণে উৎসাহ জোগাবে।

Advertisements

HDFC ও অন্যান্য ব্যাংকের পদক্ষেপ:
এই সপ্তাহের শুরুতেই HDFC ব্যাংকও তাদের লেন্ডিং রেট কমিয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ৩ কোটি টাকার কম পরিমাণের ফিক্সড ডিপোজিটে সর্বোচ্চ সুদের হার এখন ৬.৬ শতাংশ প্রতি বছর। এর ফলে ঋণের ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে।

এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্সের এই পদক্ষেপ শুধু গ্রাহকদের জন্য নয়, গোটা অর্থনীতির জন্যই একটি ইতিবাচক বার্তা। যেখানে অর্থনৈতিক চাপে অনেক পরিবার বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছিল, সেখানে নতুন করে আশা তৈরি হচ্ছে। সুদের হার কমে যাওয়ায় EMI-র বোঝা কমবে, যা দীর্ঘমেয়াদে ঋণগ্রহীতাদের জন্য উপকারী হবে।

এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনে আরও কোন কোন আর্থিক সংস্থা এই পথে হাঁটে এবং ভারতীয় আবাসন খাত কতটা গতি পায় এই সুদের হার হ্রাসের মাধ্যমে। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, মধ্যবিত্তের বাড়ি কেনার স্বপ্ন এক ধাপ এগিয়ে গেল এলআইসি হাউজিং ফাইন্যান্সের এই সিদ্ধান্তে।