INC: জাতীয় কংগ্রেসে বাঙালি সভাপতি একদম নয়, আতঙ্ক তাড়া করছে এখনও

ভয় কাটেনি এখনও। আট দশক পরেও সেই ভয় আছে স্বমহিমায়। যদি বিদ্রোহ হয়? সেই ভয় থেকে আর বাঙালি সভাপতি করার কথা ভাবতেও পারেনি জাতীয় কংগ্রেস…

ভয় কাটেনি এখনও। আট দশক পরেও সেই ভয় আছে স্বমহিমায়। যদি বিদ্রোহ হয়? সেই ভয় থেকে আর বাঙালি সভাপতি করার কথা ভাবতেও পারেনি জাতীয় কংগ্রেস (INC)। অথচ এই গত আট দশকের মাঝে স্বাধীনতা এসেছে। কংগ্রেস ভারত শাসন করছে সর্বাধিক সময়ে। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘মস্তিষ্ক’ হয়ে দলটি পরিচালনার গোপন চাবি ছিল বাঙালির হাতেই। তবে কংগ্রেসের সভাপতি পদে বাঙালি! এ যেন এক আতঙ্ক।

  • কংগ্রেসের ইতিহাসে স্বাধীনতার আগে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বাঙালিরা।
  • উমেশচন্দ্র থেকে সুভাষচন্দ্র, বাংলাভাষীরা কংগ্রেস চালিয়েছেন নিজ স্টাইলে।
  • আট দশক আগে ঘটা বিদ্রোহ ছড়িয়ে রেখেছে আতঙ্কের রেশ।

কংগ্রেসের ভাঙন ও তার গঠনগত ইতিহাসের রেশ ধরে এখন যে দলটি তা ইন্দিরা কংগ্রেস বা কংগ্রেস (ই) বাকি সব ভাগ-উপভাগ যা তৈরি হয়েছিল কালের চাকায় সেসব নিষ্পেশিত হয়ে গেছে। কংগ্রেস (ই) আক্ষরিক অর্থে জাতীয় কংগ্রেস। ইন্দিরা গান্ধীর তৈরি এমন কংগ্রেসকে অন্দরে থেকে ছলে বলে কৌশলে টেনে নিয়ে যেতেন বিশ্বস্ত প্রণব মুখোপাধ্যায়।

   

তবে প্রণববাবু যে বিদ্রোহী হতে পারেন তাও দেখিয়েছিলেন নিজের তৈরি রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস গঠন করে। ইন্দিরা হত্যার পর কংগ্রেসের প্রবল গোষ্ঠিবাজির শিকার হয়ে বিদ্রোহী হন প্রণব। তবে কূটনীতিক প্রণব যেহেতু মেঠো রাজনীতিক নন তাই সংগঠন দাঁড়ায়নি। পরে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে ঝগড়া মিটিয়ে তিনি প্রত্যাবর্তন করেন মূল দলে।

ইন্দিরা জমানা থেকে রাজীব-সোনিয়া ও খানিকটা রাহুল গান্ধী পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি যারাই হয়েছেন তাঁদের কাছে প্রণববাবু ছিলেন কংগ্রেসের মস্তিষ্ক। কিন্তু সভাপতি নন! আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন কোনও ভোটের ফল আসত না। ফলে প্রণব মুখার্জি, গণিখান চৌধুরী, অধীর চৌধুরী যতই চর্চিত সাংসদ হন না কেন তাঁরা আর সভাপতি দৌড়ে গান্ধীদের বিরাগভজন হতে চাননি। দরকারও মনে করেননি। 

Advertisements

তবে প্রণবের সাময়িক ক্ষোভ ও কংগ্রেস ত্যাগ ছিল দলটির মধ্যে সর্বশেষ বাঙালি বিদ্রোহ! কারণ এর আগে একমাত্র সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসে তুমুল বিদ্রোহের ঝড় তুলেছিলেন। তাঁর বিদ্রোহে কংগ্রেস কতটা ভেঙেছিল সেটা গবেষণার বিষয়। তবে তার থেকেও বড় কংগ্রেসের ভিতর ভয় ঢুকেছিল-বাঙালি ভীতি। সুভাষের বিদ্রোহ থেকে হিন্দি বলয়ের কংগ্রেস নেতারা স্পষ্ট বুঝে যান, বাঙালি কেউ সংগঠনের হাল ধরলে বিপদ অনিবার্য। ঠিক সেই কারণে কংগ্রেস তার সাংগঠনিক শীর্ষ পদে বাঙালি মুখ আনেনি।

দলীয় পদে চূড়ান্ত ভোটাভুটির পর জয়ী কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বুঝলেন এ দল তাঁর আক্রমণাত্মক রাজনীতি নিতে অক্ষম। তিনি মহাত্মা গান্ধীকে একটি প্রণাম ঠুকে সরে গেলেন। ১৯৩৯ সালে তিতিবিরক্ত হয়ে সুভাষবাবুর কংগ্রেস সভাপতির পদত্যাগ, পরে বামপন্থী মানসিকতা নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন সবই লিখিত চর্চিত ইতিহাস। কিন্তু এই ইতিহাসের মধ্যে ঢুকে আছে কংগ্রেসের সুভাষভীতি-বাঙালিভীতি! টানা আট দশক পর সেই আতঙ্ক ধারা বয়ে চলেছে জাতীয় কংগ্রেসের ভিতর।