Health: কী অদ্ভুত! পেটের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে বিয়ার

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: তাজ্জব কাণ্ড! মদ খান না, অথচ মাতাল অবস্থায় যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে বা ঝিমিয়ে পড়েন! বিয়ার (Beer) তৈরি হচ্ছে ওনার পেটে। এরপর অ্যালকোহল…

Man Finds Out His Stomach Was Brewing Its Own Beer

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: তাজ্জব কাণ্ড! মদ খান না, অথচ মাতাল অবস্থায় যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে বা ঝিমিয়ে পড়েন! বিয়ার (Beer) তৈরি হচ্ছে ওনার পেটে। এরপর অ্যালকোহল টেস্টারে রোগ ধরা পড়ে, তিনি অটো ব্রুয়ারি রোগে আক্রান্ত।

মানুষ টাকা খরচ করে যেখানে বিয়ার কিনে পান করে সেখানে কি-না কারো পেটেই তৈরি হচ্ছে বিয়ার। বিষয়টি অদ্ভূত মনে হলেও সত্যিই। ঘটনাটি মদ্যপান করে রাস্তায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে মার্কিন পুলিশ যখন তাকে ধরেছিলো, নিজেই খানিক বিস্মিত হয়েছিলেন! কারণ, তিনি তো মদ ছুঁয়েও দেখেন না। তবে পুলিশ বিশ্বাস করবে কেন! ব্রেদালাইজার টেস্ট বলছে, রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা শূন্য দশমিক ২। ড্রিংক-ড্রাইভ লিমিটের পাঁচ গুণ বেশি তিনি মদ্যপান করেছেন। অগত্যা, যে শাস্তি প্রাপ্য, তাই হয়েছে। ২০১৪ সালের।

বছর ছেচল্লিশের ওই ব্যক্তির বক্তব্য, শুধু পুলিশ কেন, পরিবারও তাকে কখনো বিশ্বাস করতে চায়নি। এই সেদিন পর্যন্ত পরিবারের বদ্ধমূল ধারণা ছিলো, তিনি লুকিয়ে মদ্যপান করেন। সন্দেহের অনেক কারণও ছিল। বেসামাল শরীর, ঝিম মেরে থাকা… নেশার যাবতীয় লক্ষণই ছিল তার মধ্যে।

Man Finds Out His Stomach Was Brewing Its Own Beer

তিনি নিজেও ভেবে পেতেন না, কেন এমনটি হয়। পরবর্তীতে তিনি মদ্যপানের বিয়য়টি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করতে থাকেন। পুলিশেরাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এটা তার অসুখ মেনে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তখনো তিনি নিজের রোগ সম্বন্ধে জানতেন না।

ঘটনার তিন বছর পর, ২০১৭ সালে মেডিকেল পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি বিরল অদ্ভুত এক অসুখের শিকার! তার পেটের মধ্যেই অনবরত প্রস্তুত হচ্ছে বিয়ার। কারণ, তার অন্ত্রে বাসা বেঁধেছে ব্রুয়ার ছত্রাক। বিশেষ ধরনের ওই ছত্রাকের উপস্থিতিতেই পেট ভরে যাচ্ছে বিয়ারে।

ব্রুয়ার ইস্ট বা ছত্রাকই কার্বোহাইড্রেটকে অ্যালকোহলে রূপান্তর করছে। মেডিকেল পরিভাষায় এই অসুখটিকে বলা হচ্ছে, অটো-ব্রুয়ারি সিনড্রোম। অসুখটি চিহ্নিত করেন নিউ ইয়র্কের রিচমন্ড ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিত্‍‌সকেরা।

বিএমজে ওপেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির এই কেস স্টাডি রিপোর্টটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। চিকিত্‍‌সকদের ধারণা, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেই এই সিনড্রোমের শিকার ওই ব্যক্তি। বিগত কয়েক বছর ধরেই তিনি ভুগছেন। হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতিশক্তি। চাকরিও ছাড়তে হয়েছে।চিকিত্‍‌সা করতে গিয়ে ডাক্তাররা জানতে পারেন, বেশির ভাগ সময় তিনি কার্বোহাইড্রেট-প্যাকড খাবার কিনে খেতেন। এ ধরনের খাবারে তার রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১০০ মিলিলিটার রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা ৪০০ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যায়। ড্রিংক-ড্রাই সীমার ১১ গুণ বেশি।

কেস স্টাডি করতে গিয়ে ডাক্তাররা জানতে পারেন, ২০১১ সালে বুড়ো আঙুলে চোটের চিকিত্‍‌সা করাতে গিয়ে, ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছিলেন। সেই অ্যান্টিবায়োটিক থেকেই এই পরিণতি হয়েছে বলে ডাক্তাররা দাবি করছেন। তাদের ধারণা, অন্ত্রে থাকা জীবাণু বা মাইক্রোবসের ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে ওই অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স।

এই রোগে আক্রান্ত আরেক ব্যক্তি ৩৯ বছর বয়সী নিক হেস। তিনি বলেন, অটো-ব্রুয়ারি সিন্ড্রোম তাকে সবসময় নেশাগ্রস্থে পরিণত করে। তিনি বলেন, সবসময় ঝিমিয়ে থাকার কারণে তাকে কলেজ ছাড়তে হয়েছিলো। প্রতিদিনই তিনি বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গগুলোতে ভোগেন। প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক এই মানুষটির রোগ নির্ধারণের চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন।

নিকের স্ত্রীও বিশ্বাস করেননি যে তিনি মদ্যপ নন। এজন্য তার স্ত্রী তার প্রতিদিনের গতিবেগ রেকর্ড করে রাখা শুরু করেন। অতঃপর নিকের স্ত্রী দেখলেন, ঘুম থেকে ওঠার মুহুর্ত থেকে সে ক্রমশ মাতালগ্রস্থ হয়ে পড়ছে।

তার স্ত্রী কর্ডেল বলেন, নিক ছয় বছর ধরে অটো-ব্রুওয়ারি সিন্ড্রোমে ভুগছেন। যেদিন রাতে নিক ভারী খাবার যেমন আইসক্রিম, পিজ্জা ইত্যাদি খেতেন পরের দিন বিকেলে তিনি সাধারণত নেশার চিহ্ন দেখাতেন।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারই নয় অন্যান্য ওষুধেও এই অসুখ বাড়তে পারে। এছাড়াও পরিবেশগত টক্সিন বা খাবারের সংরক্ষণাগারগুলোও শরীরের ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্যকে ব্যাহত করে অটো-ব্রুয়ারি সিনড্রোমের কারণ হতে পারে। অটো-ব্রুয়ারি সিন্ড্রোমের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে মেজাজ পরিবর্তন, ঝিমঝিমে ভাব এবং প্রলাপ বকা ইত্যাদি হতে পারে।