২০২৫ সালের ধনতেরাসকে সামনে রেখে সোনার বাজারে উৎসবের আবহ ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে এই মূল্যবান ধাতুটির, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও উচ্ছ্বাসের কারণ হয়েছে। বর্তমানে ভারতে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৩২,৭০০ টাকা, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
সোনার এই দামের উত্থানের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির ক্রমবর্ধমান ক্রয়, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহ্রাসের আশঙ্কা এবং রুপির অবমূল্যায়ন।
ধনতেরাসে সোনার ঐতিহ্য ও আবেগ:
ভারতে উৎসব মানেই শুধু আনন্দ নয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও তা গুরুত্বপূর্ণ। ধনতেরাস সোনার কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে শুভ দিন হিসেবে ধরা হয়। প্রতিবছর এই সময়ে গহনার দোকানগুলোতে দেখা যায় লম্বা লাইন, বিশ্বাস ও আর্থিক বিচক্ষণতা একসাথে মিশে যায় এই ঐতিহ্যে।
ভারতীয় পরিবারগুলির কাছে সোনা শুধুমাত্র অলঙ্কার নয়, এটি নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রতীক। অনুমান করা হয়, ভারতীয়দের হাতে থাকা ব্যক্তিগত সোনার সম্পদের মূল্য এখন প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, দাম আরও বাড়তে পারে: Gold price all-time high India
অ্যাক্সিস ডাইরেক্টের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ধনতেরাস থেকে সোনা প্রায় ৬০% রিটার্ন দিয়েছে, যা নিফটি ৫০ সূচককেও ছাড়িয়ে গেছে। কম সুদের হার, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এই উত্থানের মূল কারণ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, আগামী বছর সোনার দামে প্রভাব ফেলবে বেশ কিছু কাঠামোগত ও বৈশ্বিক প্রবণতা—বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি ও “ডি-ডলারাইজেশন” বা মার্কিন ডলার নির্ভরতা হ্রাসের প্রবণতা। অনেক দেশ এখন তাদের রিজার্ভ বৈচিত্র্যময় করছে, যা সোনার চাহিদা আরও বাড়াতে পারে। এছাড়া ইটিএফ (ETF) বিনিয়োগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়চাহিদা এই বাজারকে মজবুত করছে।
ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য কৌশলগত পরামর্শ:
অ্যাক্সিস ডাইরেক্ট জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীরা ১,০৫,০০০ থেকে ১,১৫,০০০ টাকার মধ্যে দামের পরিসরে “বাই অন ডিপস” কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। তাদের মতে, আগামী দীপাবলির মধ্যে সোনা ১,৪৫,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।
গহনার বাজারে নতুন ধারা:
সোনার দামে রেকর্ড উত্থানের মাঝেই দেশের গহনার বাজারে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। রাজ ডায়মন্ডসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঈশ্বর সুরানা বলেন, “উৎসবের সময় সবসময়ই গহনা কেনা শুভ বলে ধরা হয়, তবে এখন ক্রেতারা সোনার পাশাপাশি হীরার গহনায়ও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
শেষ কথা:
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হালকা ও ডায়মন্ড-স্টাডেড ডিজাইন ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে। বাড়ছে পুরুষদের গহনার চাহিদাও—কলার কাফ, ব্রোচ থেকে শুরু করে জিপার নেকলেস পর্যন্ত।
আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনেই আজকের গহনা বাজারের এই নতুন রূপ, যা ধনতেরাসে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।