তদন্তে ‘সেটিং আশঙ্কা’ করলেও লাগাতার আন্দোলনে থাকছে সিপিআইএম

রাজ্যে সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের একাধিক প্রভাবশালী নেতাদের জেল খাটতে হয়েছে। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তকারী সংস্থার অগ্রণী ভূমিকা আর দেখা যায়নি৷ তাই তদন্তের অগ্রগতিও হয়নি৷…

রাজ্যে সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের একাধিক প্রভাবশালী নেতাদের জেল খাটতে হয়েছে। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তকারী সংস্থার অগ্রণী ভূমিকা আর দেখা যায়নি৷ তাই তদন্তের অগ্রগতিও হয়নি৷ একই ঘটনা ঘটেছে নারদ কাণ্ডেও। ভিডিও ফুটেজে টাকা নেওয়ার ছবি ফাঁস হলেও, তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে৷ দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তের কারণ কী? তার গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার৷ শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি তদন্তের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে না তো? প্রশ্ন উঠছে বিরোধী শিবিরেও।

সম্প্রতি রাজ্যের এক ডজনের বেশি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই৷ এতগুলো মামলার তদন্তের জন্য যথেষ্ট লোকবল ছিল না সিবিআইয়ের কাছে৷ সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস। এমনকি হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, ডজন খানেক সিবিআই তদন্ত শেষে নোবেল পুরস্কার হবে! মনে হচ্ছে সিবিআই-এর থেকে সিট ভাল। টানেলের শেষে কোনও আলো দেখতে পাচ্ছি না। আমি ক্লান্ত। নভেম্বর মাসে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারপর কী হয়েছে? কিছুই নয়। ক্লান্ত আমি।

আসলে হাই কোর্টের বিচারপতির বক্তব্যই যেন বিষল্যকরণীর মতো কাজ করল। আর্থিক নয়ছয়ের গন্ধ পেতেই ময়দানে নামল ইডি৷ সরাসরি গ্রেফতার করল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখ্যোপাধ্যায়কে৷ শিক্ষাক্ষেত্রের এই দুর্নীতি ইস্যুকে একেবারেই আলগা করতে নারাজ বামেরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, সেটাকেই ব্যবহার করে রাজ্যের সরকারের ওপর সুর চড়াতে চায় বামেরা। সিপিআইএম সূত্রে খবর, লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে জনসমর্থন গড়ে তোলাই এখন প্রধান লক্ষ্য তাঁদের৷

কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে কোনভাবেই বিজেপিকে জায়গা ছাড়তে নারাজ বাম নেতৃত্ব। একদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হলে দুর্নীতি বিপক্ষে মন্তব্য করছেন বাম নেতারা। আবার মহারাষ্ট্রে সঞ্জয় রাউত গ্রেফতার হলে ইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন৷ এরই মধ্যে দিল্লিতে মোদি-মমতা বৈঠককে সেটিং বলেও অভিহিত করছেন তাঁরা৷ আবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তৃণমূলের সিদ্ধান্ত নিয়েও তুলধোনা করতে পিছপা হচ্ছে না বাম শিবির।

বিধানসভা নির্বাচনের খরা কাটাতে মরিয়া বাম শিবির৷ এটাই মোক্ষম সুযোগ বলে মনে করছেন বাম নেতৃত্ব৷ তাই নিয়ম করে জেলায় জেলায় চলছে আন্দোলন কর্মসূচি। জেলার মিছিলেও অংশগ্রহণ করছেন রাজ্যের নেতারা। তৃণমূল ও বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করাই এখন প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন৷ তবে আন্দোলনের পথ এবং ভোটের অঙ্ক এক হতে পারে? প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল।

যদিও সিপিআইএমের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, গত কয়েকমাসে বিজেপি ও তৃণমূলের মুখোশ খুলে গেছে। এখন জেলায় জেলায় মিছিলে মানুষের ঢল দেখেই তা আন্দাজ করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে ভোটের অঙ্কও বলছে ফিরছে বামেরা৷ তাই হাত গুটিয়ে বসে না থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে সমান্তরালভাবে৷