কখনও বাংলায় আবার কখনও হিন্দিতে৷ কখনও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ফিল্মি কায়দায় তাঁর বক্তব্য নজর কেড়েছে আম জনতার। কম বয়সী একজন মহিলার বক্তব্যশুনতে জমায়েত হন হাজার হাজার মানুষ৷ কড়া বাক্যবাণে আবিরাম বিঁধছেন শাসক পক্ষকে৷ আবার কোথাও ভরসা জনা দশেক সতীর্থরা৷ কিছুতেই দমতে নারাজ আলিমুদ্দিনের বুস্টার মীনাক্ষী মুখ্যোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)।
শুরুর দিকে যখন বামেদের প্রদীপ নিভু নিভু সেই সময় তরুণ প্রজন্মকে হঠাৎ এগিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করেছিলেন একে গোপালন ভবনের নেতারা। দিল্লির নির্দেশ মেনেই নবীন-প্রবীণের মিশেলে নেতাদের তৈরি করতে শুরু করল আলিমুদ্দিন৷ আন্দোলনের ঝাঁঝ থাকলেও আলগা সংগঠনের কারণে বিধানসভা নির্বাচনে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল বামেদের৷
বছর ঘুরতেই খোলনলচে একেবারে বদলে গেছে দলের। প্রবীনরা জায়গা ছাড়তেই নবীনরা জায়গা পেলেন৷ এতে যাদের নাম প্রথম সারীতে রয়েছে তাঁদের অন্যতম মীনাক্ষী৷ বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের হাল ফেরাতে তাঁর বক্তব্য নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। মইদুল ইসলাম মিদ্যা ও আনিস খানের মৃত্যু প্রত্যেক মিছিলে সমস্ত যুব নেতাদের কথা তুলে ধরে যুব নেতৃত্বকে অক্সিজেন দিতে চান মীনাক্ষী৷ তাঁর উপস্থিতি যে কোনও মিছিলের রঙ বদলে দেয়৷ সেটা আন্দাজ করতে পেরেছেন বিরোধী শিবির৷ কখনও শুভেন্দু অধিকারীর মুখে, আবার কখনও কূণাল ঘোষদের বাম যুবদের পিঠ চাপড়াতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বামেদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে অনেকগুলো নতুন মুখে দেখা গেছে৷ মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে, এমন কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম মীনাক্ষী মুখ্যোপাধ্যায়। আশি ও নব্বইয়ের দশকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা টেনে একাধিক উদাহরণ দিচ্ছেন অনেকেই৷ কিন্তু মতাদর্শের দিক থেকে মোটেই আমল দিতে নারাজ বাম নেতারা। বরং তাঁদের কথায়, সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন মীনাক্ষী। সেটাই জনমত গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।
গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইয়ের মাঝে মীনাক্ষীকে প্রোজেক্ট করেছিল বামেরা৷ প্রত্যাশা অনুয়ায়ী ফলাফলে জয় হয়নি মীনাক্ষীর৷ কিন্তু দীর্ঘ সময় পরে নন্দীগ্রামে প্রচুর পার্টি অফিস ফিরে পেয়েছিল বামেরা৷ দীর্ঘ সময় ধরে ঘরছাড়া বহু কর্মীরা একে একে ঘরে ফিরেছিল। শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম নয়, জেলায় জেলায় সেই ছবি এখন অনেকটা বদল হয়েছে৷
শিল্পাঞ্চলের মীনাক্ষীর জনপ্রিয়তা সারা বাংলায়। যুবনেত্রীর বক্তব্য শুনতে দুরদুরান্ত থেকে ভিড় জমান অগনতি মানুষ৷ যে কোনও বিষয়ে স্বচ্ছন্দে যুক্তি খাড়া করে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারেন এই তরুণী। আগামী দিনে তাঁকেই তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করে আলিমুদ্দিন৷ অন্তত তেমনিটাই আভাস পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল৷