জিএসটি সংস্কার শেষ হওয়ার পর এবার রপ্তানিকারকদের জন্য সহায়তা প্যাকেজ (Relief Package) নিয়ে মাঠে নামছে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রে খবর, আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে বিপাকে পড়া বিভিন্ন রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে একগুচ্ছ লক্ষ্যমুখী প্রকল্প আনার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রধানত টেক্সটাইল ও রেডিমেড পোশাক শিল্প, রত্ন ও গয়না শিল্পে বড় ধাক্কা লেগেছে। এই ক্ষেত্রগুলির রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি চামড়া ও জুতো, রাসায়নিক দ্রব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, কৃষিপণ্য এবং সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য রপ্তানিও নতুন সমস্যার মুখে পড়েছে।
সহায়তা প্যাকেজের মূল দিকসমূহ
সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, প্রস্তাবিত প্যাকেজে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হবে –
ক্ষুদ্র ও মাঝারি রপ্তানিকারকদের তারল্য সংকট মোকাবিলা
কার্যকরী মূলধনের চাপ কমানো
রপ্তানি নির্ভর শিল্পগুলিতে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
নতুন বাজার অন্বেষণের পাশাপাশি উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার করোনা মহামারীর সময় এমএসএমই খাতের জন্য যে ধরণের উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, সেই ধরণের মডেলেই এবার রপ্তানি খাতকে সহায়তা দেওয়া হবে বলে সূত্রের দাবি।
এর পাশাপাশি বাজেটে ঘোষিত “এক্সপোর্ট প্রমোশন মিশন” দ্রুত কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্যিক উপস্থিতি বাড়ানোই মূল লক্ষ্য।
এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ২১.৬৪ শতাংশ, যা প্রায় ৩৩.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের মোট রপ্তানি ছিল ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার। এর অর্ধেক পণ্যই বর্তমানে ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশের বাজার। ২০২৪-২৫ সালে ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৪৩৭.৪২ বিলিয়ন ডলার। ফলে মার্কিন বাজারে শুল্ক চাপ ভারতীয় শিল্পের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে বলে অর্থনৈতিক মহল মনে করছে।
গত মাসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শাস্তিমূলক শুল্ক, কারণ ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কোনো পথ নেই। নতুন বাজার তৈরি, উৎপাদন বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখাই আগামী দিনের রপ্তানি নীতির প্রধান লক্ষ্য হবে। তবে বাস্তবে কতটা কার্যকরভাবে এই সহায়তা প্যাকেজ রপ্তানিকারকদের স্বস্তি দিতে পারবে, সেটাই এখন দেখার।