পুরুলিয়া: ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বালিমাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে দলের এক বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফেটে পড়েছে কর্মী-সমর্থকদের (BJP worker) মধ্যে। পুরুলিয়া সদর থানার সামনে এক বিজেপি কর্মীকে বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাকে ঘিরে জেলাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধীরা এই ঘটনাকে বিজেপির ভেতরের বিভাজনের নিদর্শন বলে দাবি করেছে। যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি kolkata24x7.in৷
বিজেপি কর্মী সুরজ শর্মা জানান, “গতরাতে একটি বালিবাহী ট্রাক্টর এলাকায় যাচ্ছিল। গাড়িটি অতিরিক্ত বোঝাই ছিল, তাই আমি সেটি আটকাই এবং সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া সদর থানায় খবর দিই। পুলিশ এসে গাড়িটি জব্দ করে।” তিনি আরও বলেন, “পরে থানায় আমাকে অভিযোগ জমা দিতে ডাকা হয়। আমি সেখানে পৌঁছতেই দেখি, বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বালিমাফিয়াদের নিয়ে থানায় ঢুকলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাকে বাইরে টেনে এনে মারধর করতে শুরু করেন। আমি কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছি।”
বর্তমানে আহত সুরজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি তিনি ইতিমধ্যেই দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার ভিডিও ও থানার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি, তবে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেটি সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বালির ব্যবসাকে ঘিরে পুরুলিয়ার বিজেপি ইউনিটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। একাংশ সংগঠনের প্রভাব ধরে রাখতে চাইছে, অন্য অংশ সেই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। সম্প্রতি জেলা জুড়ে বালিঘাট ও ট্রান্সপোর্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাপোড়েন বেড়েছে, যা এই সংঘর্ষের মূল কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিজেপির এক জেলা নেতা জানান, “এই ঘটনা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। যদি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দল অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।” তবে অপর গোষ্ঠীর বক্তব্য, “এই ঘটনা সাজানো নাটক, বিধায়ককে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই এমন চক্রান্ত করা হয়েছে।”
বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য সুযোগ হাতছাড়া করছে না। তাদের অভিযোগ, “বিজেপির ভিতরেই এখন দাঙ্গা চলছে। জনগণের সামনে দলের দ্বন্দ্ব উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পর স্পষ্ট—পুরুলিয়ায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর আড়াল করার উপায় নেই। জেলা সংগঠনের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমন অভ্যন্তরীণ বিভাজন রাজ্য নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।