নয়াদিল্লি: অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন তোলা কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে তিনি দাবি করেন, কাশ্মীর সমস্যা ও পাকিস্তান প্রসঙ্গে কংগ্রেসের “নৈতিক অধিকারই নেই” প্রশ্ন তোলার। তাঁর বক্তব্যে বারবার উঠে আসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর সময়কার সিন্ধু জলচুক্তি, একতরফা যুদ্ধবিরতি এবং শিমলা চুক্তির মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তগুলি তাঁর মতে, বর্তমান সংকটের মূল কারণ (amit shah attack congress for kashmir issue)।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) ফেরত না চাওয়ার দায় কংগ্রেসের
অমিত শাহ বলেন, “আজ যে অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে এত সমস্যা, তার অস্তিত্ব একমাত্র নেহরুর সিদ্ধান্তের কারণেই। ১৯৬০ সালে তিনি পাকিস্তানকে সিন্ধু নদীর ৮০ শতাংশ জল উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে শিমলা চুক্তির সময় ভারতের হাতে ৯৩ হাজার পাক যুদ্ধবন্দি ও ১৫ হাজার বর্গকিমি এলাকা ছিল। তখন যদি অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত চাওয়া হতো, তাহলে আজকের দিনে সশস্ত্র অভিযান চালানোর প্রয়োজন পড়ত না।”
তিনি আরও বলেন, “সেই সময় সর্দার প্যাটেল যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন, কিন্তু নেহরু একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কংগ্রেসের তখনকার ব্যর্থতা আজ দেশকে ভুগতে হচ্ছে।”
“ইন্দিরা গান্ধীকে গর্ব করি, কিন্তু শিমলা চুক্তিতে ভুল হয়েছিল”
শাহ স্পষ্ট করে বলেন, “১৯৭১ সালে গোটা দেশ ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন জানিয়েছিল। উনিই পাকিস্তানকে দু’ভাগে ভেঙেছিলেন—আমরা সবাই গর্ব করি। কিন্তু শিমলা চুক্তিতে অধিকৃত কাশ্মীরের প্রসঙ্গ না তুলে কংগ্রেস ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া করেছিল।”
অপারেশন মহাদেবে তিন পাক জঙ্গির মৃত্যু, কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ শাহ
গত সোমবার সেনার চালানো ‘অপারেশন মহাদেব’-এ তিন পাকিস্তানি জঙ্গিকে খতম করা হয়। তাদের নাম, সুলেমান, আফগান ও জিবরান। এদেরই ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসে যুক্ত বলে জানানো হয়। অমিত শাহ বলেন, “আমরা প্রমাণসহ দেখিয়েছি, এদের পাকিস্তানি ভোটার নম্বর ছিল, এমনকি ওদের কাছে যে চকলেট পাওয়া গিয়েছে, সেগুলিও পাকিস্তানে তৈরি।”
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের মন্তব্য নিয়েও সুর চড়ান শাহ। তিনি বলেন, “চিদাম্বরম প্রশ্ন তুলেছিলেন,প্রমাণ কী যে ওরা পাকিস্তানি? আমি জিজ্ঞেস করি, পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে উনি কী পাবেন? ওরা প্রমাণ চেয়ে আসলে পাকিস্তানকেই ক্লিনচিট দিচ্ছেন।” এরপরেই কটাক্ষ করে বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, পহেলগাঁও হামলাকারীদের মৃত্যুর খবর শুনে বিরোধীরা খুশি হবেন। কিন্তু দেখি তাঁরা যেন হতাশ হয়েছেন!”
রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট
অমিত শাহের মঙ্গলবারের বক্তব্য ছিল কেবল প্রতিরক্ষা নীতি বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঘিরে নয়, বরং তাঁর কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—কাশ্মীর প্রশ্নে কেন্দ্র কড়া অবস্থানে, আর কংগ্রেস অতীত ভুল ঢাকতে আজ প্রশ্ন তুলছে।