রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও সমালোচনা সামনে এনে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (West Bengal Doctors Forum) এবার নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করেছে, যা চিকিৎসক সমাজের মধ্যে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ‘অভয়া’ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো এবং যথাযথ শাস্তির দাবি উঠেছিল, কিন্তু সংগঠনটি সেই দাবিতে তেমন সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিছু সময়ের জন্য এই বিষয়টি চাপা পড়ে যায়, কিন্তু এখন সংগঠনটি সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসছে।
ডক্টরস ফোরাম ‘অভয়া স্কলারশিপ’ (Abhaya Scholarship) নামে একটি নতুন উদ্যোগের ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর ১০ জন (10 students) মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে এই স্কলারশিপ প্রদান করা হবে। এই স্কলারশিপের আওতায় পাঁচজন এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রী এবং পাঁচজন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার পথে যাওয়া ছাত্রছাত্রী বাছাই করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে প্রশ্নগুলি উঠছে, তা প্রশস্ত আকারে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, প্রশ্ন উঠছে—নিট পরীক্ষায় পাশ করে যাঁরা ডাক্তারি পড়তে আসে, তাঁরা সবাই তো মেধাবী, তাহলে তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করতে কীভাবে? একইভাবে, মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার পথে যাওয়া ছাত্রদের মধ্যে মেধাবী বাছাই করার প্রক্রিয়া কী হবে? এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় অনেকেই এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম জানিয়েছে, এই উদ্যোগের পাশাপাশি তারা আরও কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে জানুয়ারির ৮ তারিখে কলকাতায় একটি গণ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। “হুমকি সংস্কৃতির শিকল ছেড়া, ত্রস্ত থেকে ক্ষমতায়ণের পথ” এই থিম নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলা এই কনভেনশনে চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তা এবং পেশাগত অধিকারের জন্য সোচ্চার হবেন। যদিও কনভেনশনের স্থান এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি, তবে এটি চিকিৎসকদের মধ্যে এক প্রতিবাদী মানসিকতা তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই কনভেনশনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের ওপর নিপীড়ন এবং হুমকি সংস্কৃতির বিরোধিতা করা হবে।
এছাড়া, সংগঠনটি একাধিক অভিযোগও তুলেছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ৪১ জন সিনিয়র রেসিডেন্টকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে, যার তীব্র সমালোচনা করেছে ডক্টরস ফোরাম। তাদের মতে, এই ধরনের জরিমানা চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে এবং সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে শূন্য পদগুলোর দ্রুত পূরণের জন্যও সংগঠনটি দাবি জানিয়েছে। বিশেষত, জেনারেল ডিউটি মেডিকেল অফিসার (জিডিএমও) থেকে স্পেশালিস্ট পদ পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা রয়েছে, সেগুলোর অবিলম্বে পূর্ণ করার দাবি জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এসব পদ পূর্ণ না হলে রোগীদের সেবা প্রদান ব্যাহত হবে, যা পরোক্ষে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ডক্টরস ফোরামের এই নতুন কর্মসূচি এবং দাবিগুলি রাজ্য সরকারের কাছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সংগঠনটি তাদের দাবির পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করেছে, তবে রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। অনেকেই মনে করছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে এই ধরনের বিতর্ক শুধুমাত্র চিকিৎসক সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়বে। যদি চিকিৎসকদের অভাব, পেশাগত নিরাপত্তা, এবং মানসিক চাপ নিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এর ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি আরও বিলম্বিত হতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকার কীভাবে চিকিৎসকদের এই দাবিগুলির প্রতি সাড়া দেয় এবং কোন পদক্ষেপ নেয়, তা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঠিক পরিচালনা এবং চিকিৎসকদের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।