দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির কাছে আবেগ, ঐতিহ্য আর সামাজিক বন্ধনের উৎসব। পুজোর দিনগুলিতে শুধু ধর্মীয় আচার নয়, গ্রাম-শহর মিলিয়ে সামাজিক বন্ধনও আরও সুদৃঢ় হয়। সেই আবহই দেখা গেল বাঁকুড়া জেলার কেশাতড়া গ্রামে। এখানকার মহিলারা রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প থেকে পাওয়া অর্থ একত্র করে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও কেশাতড়ায় দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ধুমধাম করে। তবে এ বছরের পুজোর বিশেষত্ব হল—এই পুজোর সমস্ত অর্থের মূল উৎস গ্রামের মহিলাদের হাতে আসা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ (Laxmir bhandar) প্রকল্পের টাকা। সাধারণত পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থ জোগাড় করা ছোট গ্রামের ক্ষেত্রে অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে নানা উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের পর পুজোর আয়োজন হয়। কিন্তু এ বছর কেশাতড়া গ্রামের মহিলারা নিজেদের উদ্যোগে সমস্ত অর্থের জোগান দিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প মহিলাদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে থাকে। সেই অর্থ বহু পরিবারে ছোটখাটো খরচ মেটাতে কাজে লাগে। কিন্তু কেশাতড়ার মহিলারা একেবারেই অন্যভাবে এই অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে নিজেদের প্রাপ্ত অর্থ থেকে একটি অংশ দুর্গাপুজোর তহবিলে জমা দিয়েছেন। ধীরে ধীরে জমা হয়েছে মোটা টাকা।
পুজো উদ্যোক্তাদের মতে, এই উদ্যোগ একদিকে যেমন গ্রামের মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধির বার্তা দিচ্ছে, তেমনই সামাজিক সংহতিও বাড়াচ্ছে। “আমাদের পুজোটা অনেক বছর ধরে হয়, কিন্তু সবসময় অর্থের সংকট থাকে। এ বছর মহিলারা এগিয়ে এসেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা থেকে যেভাবে তহবিল গড়ে উঠেছে, তাতে আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছি। আশা করছি এ বছর আগের যেকোনও বছরের চেয়ে বড় এবং সুন্দর পুজো হবে,” বললেন পুজো কমিটির এক উদ্যোক্তা।
গ্রামের বাসিন্দারাও এই উদ্যোগে আপ্লুত। তাঁরা বলছেন, মহিলাদের এই পদক্ষেপ কেবল পুজোর আয়োজনের অর্থ জোগান দিচ্ছে না, বরং গ্রামের নারীদের সম্মান ও মর্যাদাও বাড়িয়ে তুলছে। আগে যেখানে আর্থিক কারণে অনেক কিছু করা যেত না, সেখানে এখন তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগে দুর্গাপুজোর মতো বিশাল আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।