কাঁকুড়গাছির (Kankurgachi)বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় ব্যাঙ্কশাল আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে নারকেলডাঙা থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভজিৎ সেন, সাব-ইনস্পেক্টর রত্না সরকার, হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথ এবং আরেক পুলিশ কর্মীকে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
এই মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI) তদন্ত করছে এবং সম্প্রতি ১৮ জনের নামে একটি চার্জশিট জমা দিয়েছে। এই চার্জশিটে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পরেশ পাল, দুই কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার ও পাপিয়া ঘোষের নামও রয়েছে। তবে এই চার পুলিশ কর্মীর নাম প্রাথমিকভাবে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, কিন্তু তারা আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
২০২১ সালের ২ মে, বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন কাঁকুড়গাছিতে বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য অভিজিৎ সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে এবং বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ এই মামলার তদন্ত পরিচালনা করলেও, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৫ অগস্ট সিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করে। সিবিআই তদন্তে নতুন মোড় নেয় যখন নিহত অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার গুরুতর অভিযোগ আনেন। তিনি দাবি করেন, ঘটনার পর নারকেলডাঙা থানার তৎকালীন ওসি শুভজিৎ সেন ঘটনাস্থলে রক্ত ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন।
এছাড়া, সাব-ইনস্পেক্টর রত্না সরকার অভিজিৎ সরকারের মাকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।বিশ্বজিৎ সরকার আদালতে বলেন, “একটা খুনের পরও ওসির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরা খুনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।” তিনি আরও দাবি করেন, চার্জশিট জমা দেওয়ার দুদিন আগে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, “এবার তোর খুন হবে না, দুর্ঘটনা ঘটবে।”
এই মামলায় তৃণমূল কর্মী সুজাতা দে-কেও ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “তৃণমূলের হয়ে যেসব পুলিশ কর্মীরা সংবিধান না মেনে তাদের কথা শোনেন, তাদের জন্য এটা একটা শিক্ষণীয় বিষয়।
যারা বিজেপি কর্মীদের খুন করেছে, তাদের একজনকেও ছাড়া হবে না।” তিনি এই ঘটনাকে ‘মিশন বাংলা’র অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে, তৃণমূল মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “ভোট আসছে, তাই সবার নাম এখন চার্জশিটে তোলা হচ্ছে।”
এই মামলায় সিবিআই-এর তদন্তে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকারের বয়ান অনুসারে, নারকেলডাঙা থানার পুলিশ এবং তৃণমূল নেতারা মিলে ষড়যন্ত্র করেছিল। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ইট ধুয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথের বিরুদ্ধে, যিনি তৎকালীন ওসি শুভজিৎ সেনের নির্দেশে এই কাজ করেছিলেন বলে দাবি করা হয়।
এই রায় রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে, যখন তৃণমূল এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে। আদালতের এই নির্দেশের ফলে ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলাগুলো নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে। সিবিআই-এর তদন্ত এখনও চলমান, এবং ভবিষ্যতে আরও সরকারি কর্মীদের নাম চার্জশিটে যুক্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
ইস্টবেঙ্গলের বড় ঘোষণা! নতুন তিন বিদেশি তারকা যোগ দিলেন
এদিকে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে এই মামলা রাজ্যের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।