নতুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চলেছে রাজ্য ক্রীড়া দফতর। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে এবং আইএফএ-র সহযোগিতায় এবার আয়োজিত হবে একটি বিশেষ ফুটবল প্রতিযোগিতা। এই টুর্নামেন্টের উদ্দেশ্য কেবল ক্রীড়াকে উৎসাহ দেওয়া নয়, পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দের জীবনদর্শন ও আদর্শকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, স্বামী বিবেকানন্দ শুধু আধ্যাত্মিকতার প্রতীক ছিলেন না, তিনি ছিলেন যুবসমাজের এক অনুপ্রেরণার নাম। শরীরচর্চা এবং খেলাধুলার গুরুত্ব তিনি সর্বদাই প্রচার করেছেন। তাই তাঁকে স্মরণ করে ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন একেবারেই সময়োপযোগী। এ বছর থেকেই জেলাভিত্তিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করা হবে। প্রতিটি জেলার তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলাররা এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
ফুটবল পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। কলকাতা ময়দান থেকে শুরু করে জেলার মাঠ— সর্বত্র ফুটবলের প্রতি আবেগ স্পষ্ট। স্বামীজির জন্মবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে এই উদ্যোগ তাই যথার্থ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন নয়, আমরা চাই রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসুক নতুন মেধা, যারা আগামী দিনে বাংলার এবং দেশের হয়ে খেলবে।”
আইএফএ (ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন)-এর কর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি জেলা পর্যায়ে বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে সেরা দলগুলোকে নিয়ে হবে মূল প্রতিযোগিতা। যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের তরফে প্রতিটি জেলার প্রশাসনকে এই প্রতিযোগিতায় সক্রিয় সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হবে। খেলার মান উন্নত করতে এবং বেশি সংখ্যক যুবককে আকৃষ্ট করতে আইএফএ-র অভিজ্ঞ কোচ ও রেফারিরা থাকবেন মাঠে।
স্বামী বিবেকানন্দ যুবকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “শরীরকে শক্তিশালী করো, ফুটবল খেলে গীতার চেয়ে বেশি স্বর্গ লাভ হবে।” তাঁর এই বিখ্যাত উক্তি আজও প্রাসঙ্গিক। ক্রীড়া দফতর মনে করছে, ফুটবলের মতো খেলার মাধ্যমে রাজ্যের যুবসমাজকে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ রাখা নয়, মানসিকভাবেও ইতিবাচক করে তোলা সম্ভব।
এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের ফলে শুধু ফুটবল নয়, গ্রামীণ ক্রীড়াব্যবস্থা এক নতুন দিশা পাবে। প্রত্যন্ত এলাকার খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে। তাঁদের অনেকেরই সুযোগ হয়নি বড় মঞ্চে খেলার। এই প্রতিযোগিতা সেই সুযোগ করে দেবে। একইসঙ্গে রাজ্যের ফুটবল প্রতিভা খুঁজে বের করতেও সহায়ক হবে এই আয়োজন।
সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের জন্য থাকবে জার্সি, বল এবং প্রয়োজনীয় ক্রীড়াসামগ্রী। এছাড়াও প্রতিযোগিতায় জয়ী দল ও খেলোয়াড়দের জন্য থাকবে বিশেষ পুরস্কার। ক্রীড়ামন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু পুরস্কার নয়, এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে নির্বাচিত সেরা খেলোয়াড়দের রাজ্যের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
রাজ্যের ক্রীড়া প্রেমী মহল এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ফুটবলপ্রেমী মানুষ মনে করছেন, এর ফলে শুধু খেলাধুলা নয়, সমাজজীবনও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে। যুবকদের মধ্যে গড়ে উঠবে শৃঙ্খলা, সহমর্মিতা এবং দলগত চেতনা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে সামনে রেখে আয়োজিত এই ফুটবল প্রতিযোগিতা একদিকে যেমন বাংলার খেলাধুলার পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে, অন্যদিকে যুবসমাজের মধ্যে নতুন উদ্যম ও চেতনার সঞ্চার করবে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ তাই কেবল একটি ক্রীড়া আয়োজন নয়, বরং এক সামাজিক আন্দোলনের সূচনা।