শুক্রবার থেকে লিডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শুরু হতে চলা প্রথম টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় দলের তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) উপর থাকবে সবার নজর। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, সাহসিকতা এবং ধারাবাহিকতা মনে করিয়ে দেয় সেই দিনগুলির, যখন সচিন তেন্ডুলকর এবং বিরাট কোহলি তাঁদের ২০-র দশকে বিশ্বের সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে দাপট দেখাতেন।
গত ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) চক্রে জয়সওয়াল ১৯টি ম্যাচে ৩৬ ইনিংসে ১,৭৯৮ রান করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। তাঁর গড় ছিল ৫২.৮৮, যার মধ্যে চারটি শতরান (দুটি ডাবল সেঞ্চুরি) এবং ১০টি অর্ধশতরান রয়েছে। তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ২১৪*। মাত্র একটি ডব্লিউটিসি চক্র খেলেই তিনি ৩৯টি ছক্কা মেরে এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে শীর্ষ চার ছক্কা-হাঁকানোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি ২০২৩-২৫ চক্রে সর্বাধিক ছক্কা মারার রেকর্ডও গড়েছেন।
জয়সওয়ালের ব্যাটিং গড় ৫২.৮৮ অসাধারণ, বিশেষ করে যখন বিশ্বব্যাপী ওপেনারদের গড় মাত্র ৩০-এর কিছু বেশি। তাঁর টেস্ট অভিষেকের পর থেকে ওপেনিং ব্যাটিং ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে, তবুও তিনি নিজের ছাপ রেখেছেন। তাঁর ছক্কা মারার ক্ষমতা ছাড়াও বিশ্বের সেরা বোলারদের সঙ্গে দ্বৈরথে নামার আগ্রহ তাঁকে আলাদা করে। গত বছর ইংল্যান্ডের ভারত সফরে জেমস অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে টানা তিনটি ছক্কা মেরে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি কিংবদন্তিদেরও সমীহ করেন না। অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে পুরো সিরিজে তিনি ১৫০ বলে ৯৮ রান করেন। এর মধ্যে নয়টি চার এবং চারটি ছক্কা ছিল। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৬৫.৩৩।
তার এই সাহসিকতা অস্ট্রেলিয়া সফরেও দেখা গেছে। পার্থে মিচেল স্টার্কের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে আট বলে শূন্য রানে আউট হলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ২৯৭ বলে ১৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। স্টার্কের বিরুদ্ধে তিনি ৬৯ বলে ৫১ রান করেন, যার মধ্যে সাতটি চার এবং একটি ছক্কা ছিল। পুরো সিরিজে স্টার্কের বিরুদ্ধে তিনি ২০৩ বলে ১৩৩ রান করেন, যা তাঁর মোট ৩৯১ রানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই পারফরম্যান্স তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক করে এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি ‘এ+’ গ্রেড পান।
ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস এবং ক্রিস ওকসের মতো তারকারা এই টেস্টে জয়সওয়ালের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তবে তাঁর সেনা (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) দেশগুলিতে সাফল্য তাঁকে এই দ্বৈরথে এগিয়ে রাখে। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্টে তাঁর রান ৫০ হলেও, অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে তিনি ১২ ইনিংসে ৬০২ রান করেছেন, গড় ৭৫.২৫। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনি ৪০০ রান করে শীর্ষ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
ইংল্যান্ডে জয়সওয়াল এখনও টেস্ট খেলেননি, তবে গত বছর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তিনি পাঁচ ম্যাচে ৭১২ রান করেছিলেন, গড় ৮৯.০০। অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে ইংল্যান্ডে তিনি সাত ইনিংসে ২৯৪ রান করেছেন, গড় ৪২.০০। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় তাঁকে ‘কিং-এর উত্তরাধিকারী’ বলা হয়েছিল, যিনি বিরাট কোহলির মতো ভারতের সংকটমোচক হতে পারেন। লিডসে তিনি কি সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন? তাঁর ক্রিকেট দর্শন—কিংবদন্তিদের প্রতি শ্রদ্ধার পরিবর্তে আক্রমণাত্মক মনোভাব—তাঁকে কতদূর নিয়ে যাবে, তা দেখার অপেক্ষা।