শীতলতম দিনে উত্তাপ বাড়ল ভোরের কলকাতায়, পদক জয় বঙ্গ তনয়ার

রবিবার কলকাতা বাসীর জন্য এক বিশেষ দিন হয়ে উঠেছিল। কারণ, এই দিনেই অনুষ্ঠিত হলো টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫K (Tata Steel World 25K) কলকাতা ম্যারাথন (Kolkata…

Kolkata Marathon by Tata Steel World 25K

রবিবার কলকাতা বাসীর জন্য এক বিশেষ দিন হয়ে উঠেছিল। কারণ, এই দিনেই অনুষ্ঠিত হলো টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫K (Tata Steel World 25K) কলকাতা ম্যারাথন (Kolkata Marathon)। এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক মানের ম্যারাথন, যার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য নামকরা অ্যাথলেটরা (Athletics)। এই ম্যারাথন কলকাতার ঐতিহাসিক (Kolkata Historical Place) রেড রোড থেকে শুরু হয়ে পুনরায় রেড রোডেই শেষ হয়। এবারের ম্যারাথন ছিল বিশ্বের প্রথম ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস গোল্ড লেবেল ২৫ কিলোমিটার দৌড় (World Athletics Gold Label 25K Race), যা কলকাতার জন্য এক বিশেষ গর্বের বিষয়।

এই দিন, ‘সিটি অফ জয়ের’ রাস্তায় দৌড়াতে দেখা গেল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অ্যাথলেটদের। তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিলেন ভারতের দৌড়বিদরাও, যারা আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের মেধা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছিলেন। দেশ-বিদেশের নামি দৌড়বিদের পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার সাধারণ প্রতিযোগীও অংশগ্রহণ করেন, যা এই ম্যারাথনকে আরও এক নতুন মাইলফলকে পৌঁছে দেয়।

   

এবছর শীতলতম দিনে কলকাতা তার সমস্ত উষ্ণতা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫ কিলোমিটার কলকাতা ম্যারাথন শহরের সারা পাড়া, গলি, রাস্তা ছড়িয়ে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। এই ম্যারাথনে পেশাদার অ্যাথলেটদের পাশাপাশি এমন বহু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন যারা ম্যারাথনকে শুধুমাত্র একটি শারীরিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং রবিবারের আনন্দের অংশ হিসেবেই নিয়েছিলেন।

ম্যারাথনটি একাধিক বিভাগে আয়োজন করা হয়েছিল। যেমন, ১০ কিলোমিটার দৌড়, ২৫ কিলোমিটার দৌড়, সেখানে ছিল পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আন্তর্জাতিক এবং ভারতীয় বিভাগ। এছাড়া ছিল বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ দৌড় প্রতিযোগিতা।

রবিবার ভোর ৫.৩০ মিনিটে প্রথম দৌড় শুরু হয়েছিল ১০ কিলোমিটার দূরত্বের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এই বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার (Kolkata Police Commissioner) মনোজ ভার্মা, যিনি সস্ত্রীক এই ম্যারাথনে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় ২৫ কিলোমিটার রেস।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার সল ক্যাম্পবেল (Sol Campbell), ভারতীয় বক্সার মেরি কম (Mary Kom), রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose), রাজ্য ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ দেবাশীষ কুমার সহ আরও অনেক অতিথি।

পুরুষদের আন্তর্জাতিক বিভাগে সেরা হয়েছেন উগান্ডার স্টেফেন কিসা, যিনি ১ ঘন্টা ১২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে ২৫ কিলোমিটার রেস শেষ করেন। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন কেনিয়ার ড্যানিয়েল এবেনিও এবং তৃতীয় স্থানে ছিলেন কেনিয়ার আরেক প্রতিযোগী অ্যান্তনিও কিপচিরচির। মহিলাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রথম স্থান দখল করেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন সুতুমে কেবেডে, যিনি ১ ঘন্টা ১৯ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন।

এছাড়া ভারতীয় পুরুষদের বিভাগে প্রথম স্থান দখল করেছেন গুলবীর সিং, যিনি ১ ঘন্টা ১৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডে ২৫ কিলোমিটার রেস শেষ করেন। তাঁর পরেই কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সাওয়ান বারওয়াল এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন গৌরব মাথুর। মহিলাদের ভারতীয় বিভাগে সঞ্জীবণী যাদব প্রথম, বঙ্গ কন্যা লিলি দাস দ্বিতীয় এবং কবিতা যাদব তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

ম্যারাথনের রুট ছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো দিয়ে, যেখানে রেড রোড থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন খিদিরপুর রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, মেয়ো রোড, পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট ফ্লাইওভার, গোলপার্ক, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোড এবং এক্সাইড ক্রসিং পার করে আবার রেড রোডে এসে শেষ হয়।

এবারের ম্যারাথন শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি কলকাতার জন্য একটি বিশেষ সন্মান এবং উৎসব হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। এতে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ, তাদের সাহসিকতা, এবং দলগত চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল এক নতুন ইতিহাস।

কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, জানুয়ারির শেষে কলকাতা পুলিশও তাদের নিজস্ব ম্যারাথনের আয়োজন করবে। এর মাধ্যমে কলকাতা শহরের ম্যারাথন সংস্কৃতির আরও বিস্তার ঘটবে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এর মধ্যে অংশগ্রহণ করবেন।

এভাবে, শীতের একটি সকালের দৌড়ে কলকাতা আবারও এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করল। একদিকে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাথলেটদের দৌড়, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের উৎসাহ আর অংশগ্রহণ, সব মিলিয়ে কলকাতা ম্যারাথন হয়ে উঠেছে একটি বিশ্বমানের আয়োজন।