ইংল্যান্ড – ভারতের মধ্যে হেডিংলিতে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে ভারতের সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্থকে (Rishabh Pant) ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠল । আম্পায়ারের কাছে বল পরিবর্তনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পন্থের তীব্র প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (ICC) শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
কী ঘটেছিল পন্থের ক্ষোভের পেছনে?
ঘটনাটি ঘটে ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৬১তম ওভারের শেষে, যখন হ্যারি ব্রুক মোহাম্মদ সিরাজের বলে একটি চতুর র্যাম্প শট খেলে স্লিপের উপর দিয়ে বাউন্ডারি নেন। এর পরেই পন্থ মনে করেন যে বলের আকৃতি বদলে গেছে। তিনি অন-ফিল্ড আম্পায়ার পল রিফেলের কাছে বল পরিবর্তনের আবেদন করেন। রিফেল স্ট্যান্ডার্ড বল গেজ ব্যবহার করে বলটি খেলার উপযোগী বলে ঘোষণা করেন এবং অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
এই সিদ্ধান্ত পন্থের পছন্দ হয়নি। তিনি আরও যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু রিফেল অটল থাকেন। এরপর পন্থ রাগে বলটি ব্যাকহ্যান্ডে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেন এবং বিরক্তি প্রকাশ করে হেঁটে চলে যান। হেডিংলির দর্শকরা তাঁর এই আচরণে হতাশা প্রকাশ করে তাঁকে হট্টগোল করে।
আইসিসি আচরণবিধি কী বলে?
পন্থের এই ক্রিয়াকলাপ আইসিসি আচরণবিধির দুটি ধারা লঙ্ঘন করতে পারে:
• ধারা ২.৮: আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়ে।
• উপধারা (ক): স্পষ্ট ও অতিরিক্ত হতাশা প্রকাশ।
• উপধারা (ঘ): আম্পায়ারের সঙ্গে দীর্ঘ বা আক্রমণাত্মক আলোচনা।
• ধারা ২.৯: আম্পায়ারের দিকে বা কাছাকাছি অনুপযুক্ত বা বিপজ্জনকভাবে বল ছোঁড়ার নিষেধাজ্ঞা।
এই দুটি ধারাই লেভেল ১ বা লেভেল ২ শাস্তির আওতায় পড়ে, যার মধ্যে জরিমানা, ডিমেরিট পয়েন্ট, বা চরম ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে। যদিও পন্থ সরাসরি আম্পায়ারের দিকে বল ছুঁড়েননি, তাঁর ব্যাকহ্যান্ড ছোঁড়া এবং ক্ষোভ প্রতিক্রিয়া অসন্তোষের প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
কমেন্ট্রি বক্সের প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি কমেন্ট্রি বক্সেও আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। প্রাক্তন ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী বলেন, “যখন তুমি বারবার বল পরিবর্তন করতে চাও, তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে কিছুই ঘটছে না। আমরা চাই কিছু ঘটুক। এটা পন্থের হতাশার প্রকাশ ছিল।”
অন্যদিকে, প্রাক্তন ইংলিশ ব্যাটার মার্ক বুচার সমালোচনা করে বলেন, “পন্থ একজন পারফর্মার, হয়তো এটা দর্শকদের উত্তেজিত করার জন্য ছিল। কিন্তু পল রিফেল এটা পছন্দ করেননি। এই প্রতিক্রিয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।”
ম্যাচে প্রভাব এবং মোমেন্টামের পরিবর্তন
আশ্চর্যজনকভাবে, এই বল-বিতর্ক ভারতীয় দলের মধ্যে নতুন শক্তি সঞ্চার করে। পরের ওভারেই সিরাজ ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকসকে আউট করে দেন, ইংল্যান্ডকে ভারতের ৪৭১ রানের জবাবে ২৭৬/৫-এ নামিয়ে আনেন।
এই ঘটনার পর আম্পায়াররা বলের অবস্থা পরীক্ষা করতে একাধিকবার আলোচনা করেন। শুভমান গিল এবং জসপ্রীত বুমরাহও ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন, যা মাঠে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করে।
এরপর কী হবে? পন্থ কি শাস্তি পাবেন?
আইসিসি এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে সিদ্ধান্ত সম্ভবত ম্যাচ শেষে নেওয়া হবে। পন্থের প্রতিক্রিয়া উত্তেজনাপূর্ণ হলেও সরাসরি আক্রমণাত্মক বা ক্ষতিকর ছিল না। তাই লেভেল ১ শাস্তি, যেমন তিরস্কার বা জরিমানা, সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছে।
অতীতে এই ধরনের ঘটনায় সাধারণত ছোটখাটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যখন আম্পায়ারের প্রতি সরাসরি ক্ষতি বা অপমানের উদ্দেশ্য থাকে না। তবে, পন্থের মতো দলের নেতার কাছ থেকে আচরণের উচ্চ মান বজায় রাখতে আইসিসি পদক্ষেপ নিতে পারে।