ইডেন থেকে ফাইনাল সরানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর, কী বললেন জানুন

ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens) মানে শুধু ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়, বাঙালির আবেগ, ইতিহাস আর গর্বের নাম। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের সাক্ষী থেকেছে এই…

Mamata Banerjee react on IPL 2025 Final

ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens) মানে শুধু ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়, বাঙালির আবেগ, ইতিহাস আর গর্বের নাম। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের সাক্ষী থেকেছে এই স্টেডিয়াম। এমন একটি জায়গা থেকে হঠাৎ করে আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচ—দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল—সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে শুধু ক্রীড়ামহলে নয়, রাজনীতিতেও ঝড় তুলবে, তা অনুমান করাই যেত। এই বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) বঙ্গ সফরের দিনই তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

এই সিদ্ধান্তে প্রথম প্রতিবাদ জানান রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তোলেন। এবার সেই সুরেই সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডেন থেকে ফাইনাল ম্যাচ সরিয়ে নেওয়াকে ‘রাজনৈতিক খেলা’ বলেই কটাক্ষ করলেন তিনি।

   

প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফরের দিনই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা মোদি স্টেডিয়াম করে দিয়েছেন, আর সব খেলা নিয়ে চলে যাচ্ছেন সেখানে। তার কারণ? ওখানে কাটমানি নেই, ফাইন মানি রয়েছে। ফাইন মানে আমি ফাইন করার কথা বলছি না, সুন্দর বলছি। কেন বাংলায় হবে না খেলা? কেরলে, কর্নাটকে, ঝাড়খণ্ডে হবে না, সব খেলা হবে শুধু গুজরাতে? আসল অঙ্কটা কী?”

মমতার এই বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি মনে করছেন কেন্দ্রীয় সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে দিতে চাইছে। কেন্দ্রের পদক্ষেপে তিনি রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। যদিও বোর্ডের তরফে এর পেছনে ‘বৃষ্টি এবং অন্যান্য কারণ’ দেখানো হয়েছে, তবুও প্রশ্ন উঠছে—আবহাওয়া কি একমাত্র কারণ?

নিয়ম ভেঙে বদল?

আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, যে দল চ্যাম্পিয়ন হয়, তার হোমগ্রাউন্ডেই পরের মরসুমের উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই নিয়ম মেনেই এবার ইডেনে উদ্বোধনী ম্যাচ হয়েছিল। তাই ধরে নেওয়া হয়েছিল, ফাইনালও সেখানেই হবে। কিন্তু ভারত-পাক সীমান্তে উত্তেজনার কারণে আইপিএল কিছুদিন স্থগিত ছিল, যা পরে আবার শুরু হয়। এই নতুন সূচিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ—দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল—সরাসরি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আমদাবাদে, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে।

এই সিদ্ধান্তে ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দুই-ই জন্ম নিয়েছে। কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা একে নিজেদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো বলেই মনে করছেন।

গুজরাটের প্রতি পক্ষপাত?

Advertisements

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পরিকাঠামো এবং দর্শক ধারণক্ষমতার দিক থেকে এটি অনন্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন প্রতিবারই গুজরাট এত সুবিধা পায়? শুধু এই মরশুমেই নয়, অতীতেও দেখা গেছে একাধিক ম্যাচ গুজরাতে আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে দেশের অন্যান্য রাজ্য, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, নিয়মিত অবহেলিত হচ্ছে।

রাজনীতির রঙে ক্রীড়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ এক নতুন ট্রেন্ড, যেখানে ক্রীড়াক্ষেত্রও রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েনের মধ্যে রাজ্যবাসী, বিশেষ করে ক্রীড়াপ্রেমীরা বঞ্চিত হচ্ছেন আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে।

মমতার খোঁচা—সাধারণ ক্ষোভ, না রাজনৈতিক বার্তা?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুধু ক্রীড়াপ্রেমীদের আবেগকেই তুলে ধরেনি, বরং তা রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীকে নাম না করে খোঁচা দিয়ে তিনি যে বলতে চাইলেন, “সব খেলা এখন মোদি স্টেডিয়ামে কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে”, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর মতে, এর মধ্যে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

ইডেন গার্ডেন্স থেকে আইপিএলের ফাইনাল ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া নিছকই আবহাওয়ার কারণে হয়েছে, নাকি এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক চাল—তা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনার জেরে রাজনীতি ও ক্রীড়া জগৎ যে আবার একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে, তা স্পষ্ট। বাংলার মানুষ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তাদের ক্ষোভই যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছে।