ভারতীয় ফুটবলে রেফারিং ইস্যু (Refereeing controversies) নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে প্রচুর বিতর্ক দেখা গিয়েছে। ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষের ছবি দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে। কলকাতা ময়দানের তিন প্রধান ক্লাব—ইমামি ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং মহামেডান স্পোর্টিং—এই বিতর্কের বাইরে নয়। অনেক ম্যাচে রেফারির পক্ষপাতদুষ্ট বা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে দলের ক্ষতি হয়েছে, যা নিয়ে বারবার আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন ক্লাব। এই প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি চালুর দাবি বহুদিন ধরেই উঠে এসেছে, কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
আইএসএলে ভিএআর চালুর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে যে আইএসএলের পরবর্তী মরসুমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রথম ডিভিশন লিগগুলির মতোই ভিএআর প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কোনও ঘোষণা করা হয়নি। আইএসএল আয়োজক এবং এআইএফএফ-এর মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। এই প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে ভারতীয় ফুটবলে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং ভুল রেফারিং কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সহ আরও অন্যান্য ক্লাবের সমর্থনে এই দাবির গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
ইস্টবেঙ্গলের বৈঠকে ভিএআরের দাবি
গত মঙ্গলবার ইমামি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফ থেকে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্যরা, যেখানে তারা রেফারিংয়ের গাফিলতি এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলির বিষয়ে আলোকপাত করেন। বৈঠকে আলোচনা হয় যে আইএসএল-এর মতো বড় টুর্নামেন্টে ভিএআর না থাকা একটি বড় সমস্যা, এবং এটি চালু হলে খেলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয় যে তারা ভারতীয় ফুটবলে ভিএআর চালুর পক্ষে।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য দেবব্রত সরকার বলেন, “আমরা যদি আইএসএল-এর জন্য খেলোয়াড়দের জন্য বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে পারি, তাহলে কেন ভিএআর প্রযুক্তির পিছনে এআইএফএফ অর্থ ব্যয় করতে পারবে না? এই প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে ভারতীয় ফুটবলের মান বাড়ানো সম্ভব।”
মোহনবাগান সচিবের সমর্থন
ইস্টবেঙ্গলের এই দাবির প্রেক্ষিতে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ক্লাবের পক্ষ থেকেও সমর্থনের বার্তা এসেছে। বুধবার বিকেলে মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে বাগান সচিব দেবাশিস দত্ত ইস্টবেঙ্গলের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “ওদের প্রস্তাব যথেষ্ট ভালো। আমরা এই দাবিকে সমর্থন করি। এটা বহু বছর আগে থেকেই চালু হওয়া উচিত ছিল। দেবব্রত সরকারের বক্তব্য একেবারে ঠিক। এই ধরনের খেলোয়াড়ের জন্য যেহেতু এত খরচ করা হচ্ছে, সেহেতু রেফারিংয়ের মানোন্নয়নের জন্য ভিএআর চালু করা উচিত। এটি অত্যন্ত জরুরি।”
দেবাশিস দত্ত আরও জানান যে, ভিএআর চালু হলে খেলার মান উন্নত হবে এবং ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিলিয়ে তোলা সম্ভব হবে। আইএসএল-এর মত প্রতিযোগিতায় যেখানে বিশ্বমানের খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করছেন, সেখানে রেফারিংয়ের মানোন্নয়ন অত্যন্ত প্রয়োজন।
সন্তোষ ট্রফি প্রসঙ্গে মোহনবাগান সচিবের মতামত
মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার খারাপ পারফরম্যান্স নিয়েও বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, “গত কয়েক মরসুমে সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার দল বিশেষ কোনো সাফল্য পায়নি। এর প্রধান কারণ হলো প্রয়োজনীয় আলোচনার অভাব এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাব। বাংলার ফুটবলের এই পতন রোধ করতে চাইলে স্থানীয় ফুটবল উন্নয়নে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।”
বাংলা দলের জন্য মোহনবাগান বা অন্যান্য বড় ক্লাবের খেলোয়াড়দের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন যে, স্থানীয় প্রতিভা বিকাশে আরও জোর দেওয়া দরকার এবং বিশেষ করে সন্তোষ ট্রফির জন্য ভালো মানের খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করতে হবে।
রেফারিংয়ের মানোন্নয়নে ভিএআরের প্রয়োজনীয়তা
ভারতীয় ফুটবলে রেফারিংয়ের মানোন্নয়ন করতে এবং খেলায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে ভিএআরের মতো প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। যেহেতু খেলোয়াড়রা এবং দলগুলি এই প্রযুক্তি চালুর দাবিতে একমত, তাই এআইএফএফ-এর দায়িত্ব আরও বেড়েছে। ভিএআর চালুর মাধ্যমে রেফারিংয়ের ভুল কমানো সম্ভব হবে এবং সমর্থকদের কাছেও খেলায় স্বচ্ছতার বার্তা পৌঁছে যাবে।
মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের মতো দুই বড় ক্লাবের সমর্থনে ভিএআর চালুর দাবি আরও শক্তিশালী হলো। আশা করা যায়, এআইএফএফ শীঘ্রই এই দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, এবং ভারতীয় ফুটবলে ভিএআর প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে।