মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (Madhya Pradesh Cricket Association) ৬৮ বছরের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। ২৯ বছর বয়সী মহানার্যমান সিন্ধিয়া (Mahanaryaman Scindia) হতে চলেছেন সংস্থার সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি (President)। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সিন্ধিয়া পরিবারের দখলে থাকা সভাপতি পদে এবার প্রবেশ করছেন রাজপরিবারের তৃতীয় উত্তরসূরি।
ইন্দোরের ঐতিহাসিক হোলকার স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচার মাঝে যে রাজনৈতিক এবং ক্রীড়া ইতিহাস যুগ যুগ ধরে লেখা হয়েছে। এবার সেখানে সাক্ষী থাকবে এক তরুণ নেতৃত্বের সূচনার। আগামী ২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন মহানার্যমান। তবে মনোনয়নের শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় এবং অন্য কোনও প্রার্থী না থাকায়, কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত।
মহানার্যমানের পরিবার এবং এমপিসি’র সম্পর্ক নতুন নয়। তাঁর ঠাকুরদা মাধবরাও সিন্ধিয়া ছিলেন এমপিসিএর সভাপতি, দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে। এরপর ২০০৪ সালে মহানার্যমানের বাবা, বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ৩৫ বছর বয়সে সেই দায়িত্ব নেন। এবার ২৯ বছর বয়সে সেই ঐতিহ্য বহন করে নেতৃত্বে আসছেন মহানার্যমান, যার মধ্য দিয়ে সিন্ধিয়া পরিবারের তিন প্রজন্মের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ক্রিকেট প্রশাসনে।
তবে এই পথ সহজ ছিল না। গত দুই বছর ধরে নীরবে নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা গড়ে তুলেছেন তিনি। ২০২২ সালে গোয়ালিয়র ক্রিকেট বিভাগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, চালু করেন ‘মধ্যপ্রদেশ প্রিমিয়ার লিগ – সিন্ধিয়া কাপ’। এই টুর্নামেন্ট রাজ্যের ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। তার আগ্রহ, কর্মক্ষমতা এবং আধুনিক ভাবনা রাজ্য ক্রিকেট প্রশাসনে তাঁকে এক নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরে।
মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রাজীব সিং চৌহান জানিয়েছেন, “সকল পদে নির্ধারিত প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সভাপতি হিসেবে মহানার্যমান, সম্পাদক হিসেবে সুধীর আসনানি এবং কমিটিতে আছেন দুই আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটার সন্ধ্যা আগরওয়াল ও অরুন্ধতী কিরকিরে।” একইসঙ্গে তিনি ধন্যবাদ জানান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে, যিনি এই টিম গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
অন্যদিকে সংস্থার অভ্যন্তরেও মহানার্যমানকে উদ্যমী এবং সবসময় অ্যাকটিভ একজন নেতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সঞ্জীব দুয়া বলেন, “ছয় বছর পর নতুন একটি টিম এসেছে। তরুণ মুখ এবং নতুন ভাবনা রাজ্যের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করছি।”
তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্কও কম নয়। একাংশ এই ঘটনাকে “পরিবারতন্ত্র” প্রতিফলন বলেই চিহ্নিত করছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবারের ছেলেরা ক্রমেই ক্রিকেট প্রশাসনের বড় পদে আসছেন। যার উদাহরণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ (বর্তমানে আইসিসির চেয়ারম্যান) এবং প্রয়াত অরুণ জেটলির ছেলে রোহন জেটলি (দিল্লি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি)।
তবে সমালোচনা বা বিতর্কের মাঝেও মহানার্যমানের প্রতি আশাবাদী অনেকেই। লন্ডনের স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে স্নাতক এই তরুণ নেতা এখন শুধু রাজ্য ক্রিকেটের নয়, ভবিষ্যতে রাজনীতির ময়দানেও সক্রিয় হতে পারেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলেও, মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেট প্রশাসনে ইতিমধ্যেই নতুন দিনের সূচনা হয়ে গিয়েছে। সিন্ধিয়া পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের হাত ধরে আবারও আলোচনায় সেই চেনা নাম সিন্ধিয়া বনাম সময়।
Union Minister son Mahanaryaman Scindia Elected Youngest President Of Madhya Pradesh Cricket Association