‘ব্লু টাইগার্স’ নামে পরিচিত ভারতীয় ফুটবল দল (Indian Football Team) ১৯৩৮ সালে গঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেললেও ফিফা বিশ্বকাপ এখনও দূরের স্বপ্ন। তবে এশিয়ার মঞ্চে ভারত ধীরে ধীরে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অনেক কোচ (Coach) এসেছেন, কিন্তু কেউ কেউ তাঁদের অসাধারণ নেতৃত্বে দলকে নিয়ে গেছেন উৎকর্ষের শিখরে। এই প্রতিবেদনে ভারতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে শীর্ষ পাঁচ কোচের অবদান তুলে ধরা হল।
সৈয়দ আব্দুল রহিম (Syed Abdul Rahim)
সৈয়দ আব্দুল রহিমকে ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের স্রষ্টা বলা হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ২০০১ এবং ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছিল এবং ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিক সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। রহিমের কৌশলগত দক্ষতা, শৃঙ্খলা, এবং ফিটনেসের উপর জোর দেওয়া ভারতকে এশিয়ার এক শক্তিশালী দলে রূপান্তরিত করেছিল। চুনী গোস্বামী, পিকে ব্যানার্জির মতো কিংবদন্তিদের তিনি গড়ে তুলেছিলেন, যাঁরা ভারতীয় ফুটবলের ভিত শক্ত করেছেন।
স্টিফেন কনস্টানটাইন (Stephen Constantine)
স্টিফেন কনস্টানটাইন ভারতীয় ফুটবলের আধুনিক যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি দুই মেয়াদে কোচ ছিলেন, ২০০২ থেকে ২০০৫ এবং ২০১৫ থেকে ২০১৯। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৭৩ থেকে ৯৭-এ উঠে আসে। ২০১৯ সালে এএফসি এশিয়ান কাপে আট বছর পর ভারতের যোগ্যতা অর্জন এবং ১৩ ম্যাচের অপরাজিত রেকর্ড তাঁর অবদানের প্রমাণ। তিনি তরুণ প্রতিভাদের উৎসাহিত করেছিলেন এবং সীমিত সম্পদ নিয়েও প্রতিযোগিতামূলক দল গড়েছিলেন। তাঁর সময়ে ভারত একটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছিল।
সুখবিন্দর সিং (Sukhwinder Singh)
সুখবিন্দর সিং ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন, তবে এর আগে-পরেও তিনি বেশ কয়েকবার অন্তর্বর্তী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপের এশিয়ান কোয়ালিফায়ারের চূড়ান্ত রাউন্ডে ভারতকে নিয়ে যাওয়া, যা ভারতের বিশ্বকাপ প্রচেষ্টার সেরা পারফরম্যান্স। ১৯৯৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে ভারত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল। শৃঙ্খলাবদ্ধ দল গঠন এবং সীমিত সম্পদ থেকে সেরাটা বের করে আনার ক্ষমতা তাঁকে বিশেষ করে তুলেছিল।
বব হাউটন (Bob Houghton)
ইংলিশ কোচ বব হাউটন ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর সময়কাল ভারতীয় ফুটবলের পুনরুজ্জীবনের একটি পর্ব। তিনি ভারতকে ২০০৭ সালের নেহরু কাপ, টানা দুটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০০৮ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জিতিয়ে ২৭ বছর পর ২০১১ এশিয়ান কাপে জায়গা করে দেন। হাউটন দলে কাঠামো, পেশাদারিত্ব, এবং কৌশলগত পরিচয় এনেছিলেন। তাঁর আমলে ভারতীয় ফুটবল ভবিষ্যতের জন্য একটি দিশা পেয়েছিল।
ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)
ইগর স্টিমাচ ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন। তিনি আক্রমণাত্মক ফুটবল এবং তরুণ প্রতিভা বিকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ২০২৩ সালের ত্রি-দেশীয় সিরিজ এবং সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতলেও, বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। তিনি অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে দলে এনেছিলেন এবং খেলার ধরন আধুনিক করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, ২০২৩ এশিয়ান কাপে দলের দুর্বল পারফরম্যান্স এবং র্যাঙ্কিংয়ে স্থবিরতার জন্য সমালোচনার মুখে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়।
ভারতীয় ফুটবলের যাত্রা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। সৈয়দ আব্দুল রহিমের স্বর্ণযুগ থেকে স্টিফেন কনস্টানটাইনের আধুনিক পুনর্জাগরণ, সুখবিন্দর সিংয়ের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, বব হাউটনের পুনর্গঠন এবং ইগর স্টিমাচের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা—প্রত্যেক কোচ ভারতীয় ফুটবলের গল্পে একেকটি অধ্যায় যোগ করেছেন। এই কোচদের অবদান ভারতীয় ফুটবলের সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে ব্লু টাইগার্স কি বিশ্ব মঞ্চে ছাপ ফেলতে পারবে? উত্তরের অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।
Top five coaches in history of Indian Football Team
