২০২৩-২৪ মরসুমের আই-লিগ (I-League 2023-24) শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের ফুটবলে এক নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এখন থেকে ১২টি দল প্রতিযোগিতা করবে এবং একমাত্র শিরোপাজয়ী দল পাবে প্রিমিয়ার লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL)-এ খেলার সুযোগ। আই-লিগের শিরোপা জয়ের সঙ্গে ISL-এ খেলার যে পথ খুলে যাবে তা ক্লাবগুলির জন্য বিশাল অর্থনৈতিক ও পেশাদারী সুযোগ নিয়ে আসে, এবং সেই কারণেই এই মরসুমের প্রতিযোগিতা আরও তীব্র এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এই মরসুমে তিনটি দল এমনভাবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে যা তাদের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের শক্তিশালী স্কোয়াড, সুশৃঙ্খল খেলার ধরন, এবং ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা আই-লিগ শিরোপার দিকে তাদের এগিয়ে রাখে। চলুন, দেখে নিই সেই তিনটি দল, যারা শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার হিসেবে সামনে আসছে।
১. ইন্টার কাশী
আই-লিগে নিজেদের প্রথম মরসুমে ইন্টার কাশী একটা গুরুতর প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দলটি তাদের শক্তিশালী স্কোয়াডের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যার মধ্যে অভিজ্ঞ বিদেশী ফুটবলার যেমন ডেভিড হিউমেনেস, জোনি কাওকো এবং মারিও বারকো রয়েছেন। এই বিদেশী ফুটবলাররা আক্রমণাত্মক শক্তি এবং রক্ষণাত্মক শক্তির এক অনন্য সংমিশ্রণ তৈরি করেছে।
ইন্টার কাশীর শক্তির আরেকটি দিক হল তাদের অভিজ্ঞ মিডফিল্ড কনকশনের জন্য সার্বিয়ান প্লেমেকার নিকোলা স্টোজানোভিচ এবং ফিনল্যান্ডের জোনি কাওকো, যারা খেলায় আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম। তাদের আক্রমণভাগে মারিও বারকো এবং জুলেন পেরেজের আগমন ইন্টার কাশীকে আরও শক্তিশালী করেছে। স্পেনীয় আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলারদের মিশ্রণে, ইন্টার কাশী আই-লিগের এই মরসুমে বড় কিছু ঘটানোর জন্য প্রস্তুত।
এই ক্লাবের ম্যানেজমেন্টও অত্যন্ত দক্ষ, এবং কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের নেতৃত্বে দলটি একটি শক্তিশালী সংগঠিত ইউনিট হিসেবে কাজ করছে। তাদের বাড়তে থাকা সমর্থক ভিত্তি এবং আই-লিগ শিরোপার দিকে অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা তাদের এই মরসুমে বড় কিছু অর্জন করার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে।
২. শ্রীনিধি ডেকান এফসি
শ্রীনিধি ডেকান এফসি বেশ কয়েকটি মরসুম ধরেই আই-লিগে শীর্ষ ২-এ অবস্থান করছে, কিন্তু কখনো শিরোপা জয় করা হয়নি। দলের খেলার ধরন খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং তারা সবার তুলনায় বিশেষভাবে কৌশলগতভাবে নির্ভুল। দলের মূল খেলোয়াড়রা, ভারতীয় এবং বিদেশী ফুটবলারের মিশ্রণ, অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ।
শ্রীনিধি ডেকান এফসির কোচিং সিস্টেমও যথেষ্ট শক্তিশালী, এবং ক্লাবটি প্রতিটি মরসুমে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শীর্ষে থেকে শিরোপার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তাদের দলটি এই মরসুমে আই-লিগ শিরোপা জয় করার জন্য প্রস্তুত, এবং তাদের দলগত একতা এবং অবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম তাদের জয়ী হতে সহায়ক হবে। খেলোয়াড়দের মধ্যে ডেভিড কাস্তানেদা এবং উইলিয়ামের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলাররা দলের শক্তি বৃদ্ধি করেছে, এবং তাদের সংকল্প শক্তিশালী শিরোপা অভিযান চালাতে সহায়ক হবে।
৩. গোকুলাম কেরালা এফসি
আই-লিগের ১৮তম মরসুমে গোকুলাম কেরালা এফসি এক ঐতিহ্যবাহী দল। ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ মরসুমে আই-লিগ শিরোপা জিতেছিল এবং তারা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দল। কেরালার এই ক্লাবটি পরিচিত তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল এবং কৌশলগত শৃঙ্খলাবদ্ধতার জন্য। মার্টিন চাভেস এবং এমিল বেনির মতো দক্ষ ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত এই দলটি যেকোনো সময় ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে সক্ষম।
গোকুলাম কেরালা এফসির ইতিহাস তাদের স্বর্ণালী হয়ে ওঠার প্রমাণ, এবং তারা জানে কিভাবে জিততে হয়। তাদের সাম্প্রতিক দুই শিরোপা জয়ের রেকর্ড দলটিকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং তারা তাদের অতীত গৌরব ফিরে পেতে চাইছে। দলের আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের উপস্থিতি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে রাখে।
আই-লিগ ২০২৩-২৪: উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এবারের আই-লিগ মরসুম অনেক উত্তেজনাপূর্ণ হবে, এবং ইন্টার কাশী, শ্রীনিধি ডেকান এবং গোকুলাম কেরালা এফসি তিনটি দল এই শিরোপার দাবিদার হিসেবে উঠে এসেছে। এই দলগুলোর শক্তি, খেলার ধরন এবং সামর্থ্য তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির থেকে এগিয়ে রাখে, তবে ফুটবল সবসময়ই অপ্রত্যাশিত। কোনও দল বড় সাফল্যের কাছে পৌঁছাতে পারবে কিনা, তা সময়ই বলবে।
আই-লিগের পরবর্তী কিছু সপ্তাহে কৌশলগত উত্তেজনা এবং কঠিন প্রতিযোগিতা দেখা যাবে, এবং দেশের ফুটবল ভক্তরা নিশ্চিতভাবেই এই তিনটি দলের মধ্যে শিরোপার দৌড় দেখার জন্য অপেক্ষা করবে।