প্রসেনজিৎ চৌধুরী: যে ক্রিকেট কূটনীতি আঁকড়ে তালিবান জঙ্গি সরকার বিশ্বকে নরম মনোভাবের বার্তা দিচ্ছে তার জন্য দরকার স্বীকৃতি। সেটি না হওয়ায় পুরনো গণতন্ত্রী আফগানিস্তানের পতাকা নিম পাতা গেলার মত করেই হজম করছে তালিবান।
তালিবান শাসনের আফগানিস্তানে জাতীয় পতাকা বদলে গিয়েছে। তেমনই বদলেছে সরকারি নাম। ইসলামি প্রজাতন্ত্র থেকে ইসলামি আমিরশাহি আফগানিস্তান হলেও কূটনৈতিক প্যাঁচে বিশ্ব ক্রিকেট ক্রীড়াঙ্গনে ঠাঁই পায়নি জঙ্গি সরকারের পতাকা।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শারজা স্টেডিয়ামে স্কটল্যান্ড পরাজিত হয়েছে আফগানিস্তানের কাছে। জয়ের আনন্দে শারজা থেকে কাবুল- আফগানবাসী আত্মহারা।
আফগানিস্তানের জয়ে তিনজন আবেগতাড়িত। অপসারিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘান, যিনি ‘পলাতক’। জঙ্গি তালিবানের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ চালানো পঞ্জশির উপত্যকার আফগান রেজিস্ট্যান্স ফোর্সের কমান্ডার আহমেদ মাসুদ। তিনিও আত্মগোপনে রয়েছেন। আর আছেন সোভিয়েত জমানার আফগান মার্শাল আবদুল রশিদ দোস্তাম। তালিবানের যম বলে সুপরিচিত বৃদ্ধ সেনা কমান্ডারও দেশের জয়ে তাঁদের সরকারের পতাকা উড়তে দেখলেন। তিনিও দেশত্যাগী।
মাঠে নিজেদের পতাকা না থাকলেও জঙ্গি তালিবান সরকার উল্লসিত। পরবর্তী ক্রিকেট কূটনীতির পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তালিবান শাসক।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শারজার মাঠেও দেখা যায়নি ইসলামি গণতন্ত্রী আফগানিস্তানের সেই পতাকা। শুধু মাঠ নয়, গ্যালারি থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সর্বত্র সদ্য বাতিল হওয়া পতাকার ছড়াছড়ি। কোথাও নেই তালিবান সরকারের পতাকা।
আফগানিস্তান বনাম স্কটল্যান্ডের ম্যাচ নিয়ে যত না খেলার উত্তাপ তার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে তালিবান শাসনে চলে যাওয়া দেশটির কথা। গত ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের জন্য তালিবান জঙ্গিরা আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে। চলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
কূটনীতির প্যাঁচে তালিবান শাসক। কারণ, রাষ্ট্রসংঘের অনুমোদন আসেনি। তেমনই ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান ও চিন তো বটেই বাকি কোনও দেশ পাশে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তালিবান শাসকের হয়ে রাষ্ট্রসংঘে কূটনৈতিক ততপরতা চালিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তালিবান প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাশিয়া, চিন, ইরান, ভারতের মধ্যে মস্কোতে বৈঠক হয়েছে। দিল্লিতে পরবর্তী বৈঠকও হবে।
গত ১৫ আগস্ট তালিবান জঙ্গিরা দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন সেনা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়। দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। কাবুল প্যালেস ও আইনসভায় তালিবান উড়িয়ে দেয় তাদের পতাকা। নির্দেশ জারি করা হয়, আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা পাল্টে ফেলা হয়েছে। এর পরেই আফগানিস্তান জুড়ে দুটি ছবি এসেছিল। নাগরিকরা পুরনো পতাকা নিয়েই স্বাধীনতা দিবস পালন করেন। আর দোকানে ভিড় বাড়ে নতুন তালিবানি পতাকা কেনার।
দুই বিপরীতমুখী ঘটনার পরেই তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগান জাতীয় যুব ক্রিকেট দলের প্রথম আন্তর্জাতিক সফর হয় বাংলাদেশে। সিলেট স্টেডিয়ামেও কূটনৈতিক কারণে পুরনো আফগান পতাকা ছিল।