বাবার প্রত্যাখ্যান করা ‘প্রতিবন্ধী’ ছেলের গোলেই ম্যাচ জিতল ভারত

প্যারালিম্পিকের পর এবার ফুটবল। চলতি বছরেই প্যারালিম্পিক গেমসে সবথেকে বেশি প্রায় রেকর্ডসংখ্যক ম্যাচ জিতেছিল ভারতীয় দল। এর পর ফুটবলে এক প্রতিবন্ধী তরুণ ভারতীয় ফুটবলে বিপ্লব…

Tarun Kumar Makes History: From Jabalpur to Sweden's Gothia Cup

প্যারালিম্পিকের পর এবার ফুটবল। চলতি বছরেই প্যারালিম্পিক গেমসে সবথেকে বেশি প্রায় রেকর্ডসংখ্যক ম্যাচ জিতেছিল ভারতীয় দল। এর পর ফুটবলে এক প্রতিবন্ধী তরুণ ভারতীয় ফুটবলে বিপ্লব আনলেন। তবে মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে একজন প্রতিবন্ধী ফুটবলারের গল্প যেমন আবেগপ্রবণ, তেমনি অনুপ্রেরণাদায়ক। গল্পটি 19 বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ফুটবলার তরুণ কুমারের (Tarun Kumar),যিনি 2 বছর বয়স পর্যন্ত হাঁটতেও পারেননি। কথা বলতেও অসুবিধা হচ্ছিল। বর্তমানে তরুণ হাঁটা শুরু করলেও কথা বলতে পারে না। তরুণের বাবা ছেলে ও স্ত্রীকে ছোটবেলায় পরিত্যাগ করেন। এরপর সাহস না হারিয়ে মা-ছেলে চলে আসেন নিজের বাপেরবাড়ি জবলপুরে। এর পরই ধীরে ধীরে তরুণ ভারতের হয়ে গৌরব নিয়ে আসেন। গতকালই সুইডেনে বিশেষ অলিম্পিকে ডেনমার্ককে হারিয়ে নিয়ে গোথিয়া কাপে স্বর্ণপদক দখল করেন জবলপুরের ‘তরুণ’ যুবক।

বেশ কিছুদিন আগে, ভারতীয় ফুটবল দল সুইডেনে চলমান বিশেষ অলিম্পিকের জন্য রওনা হয়েছিল। এতে মধ্যপ্রদেশের একমাত্র প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় তরুণ কুমার দলে ছিলেন। এখন তার সুবাদে ভারতীয় দল ফাইনালে উঠেছে। ফাইনালের শেষ মুহূর্তেও তরুণের জাদু দেখা গিয়েছিল। ম্যাচে যেখানে ভারত ও ডেনমার্কের স্কোর ৩-৩ সমতায় ছিল, সেখানে পেনাল্টি থেকে গোল করে ভারতের পতাকা ‘উত্তোলন’ করেন তরুণ।

   

IND vs BAN: একসঙ্গে ৩ কিংবদন্তিকে পিছনে ফেলতে পারেন অশ্বিন

এদিন ম্যাচ জেতার পর গতকাল সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তরুণের মা সঙ্গীতা ঠাকুর জানান, “তরুণের বয়স যখন ২ বছর। তখন সে হাঁটতে, শুনতে বা কথা বলতে পারত না। তার মানসিক অবস্থা দুর্বল ছিল। এই কঠিন সময়ে তার বাবাও তাঁকে ছেড়ে চলে যান, এরপর তরুণকে নিয়ে আমি আমার সাথে আমার বাবার (তার নানার) বাড়িতে নিয়ে চলে আসি। সেখানেই প্রতিপালিত হয়েছে ওঁ। তবে বাড়িটি শহর থেকে প্রায় 20 কিলোমিটার দূরে ছিল।”

তবে নানান প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও, মাত্র ৪ বছর বয়সে, তরুণের মা তাকে জাস্টিস টাংখা মেমোরিয়াল রোটারি ইনস্টিটিউট ফর স্পেশাল চিলড্রেন স্কুলে তাঁকে ভর্তি করান। এখানে তরুণ দশম শ্রেণিতে মেধাবী ছাত্র হয়ে ওঠে। তবে এর আগে প্রতিবন্ধী প্রতিযোগিতায় হকি খেলতেন তরুণ। কিন্তু, পরে তিনি হকির চেয়ে ফুটবলে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরপর টানা ৪ বছর তরুনকে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেন জাতীয় কোচ প্রভাত রাহি। এই প্রশিক্ষণের জন্য, তরুণ ২০ কিলোমিটার দূরে শিবাজি গ্রাউন্ডে আসতেন।

তরুনের মা সঙ্গীতা ঠাকুর এভাবেই ছেলেকে বড় করছেন। এখন তরুণের বয়স ১৯ বছর, কিন্তু ছেলের প্রতিবন্ধী হওয়ায় মায়ের কোনো সমস্যা নেই। তাই বাবা যেখানে এককদম পিছিয়ে গিয়েছিলেন; মা সেখানেই মহামায়া হয়ে সামনে এগিয়ে আসেন। এদিন তরুনের মা বলেন, আমাদের কখনো সাহস হারানো উচিত নয়। তরুনের (Tarun Kumar) এই অর্জনে তার দাদা-দাদি,মামা ও খালা তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। তবে এর পেছনে তরুণের স্কুল টাঙ্কা স্মৃতিসৌধেরও সমর্থন ছিল। স্কুলের নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে তরুণকে অলিম্পিকে পৌঁছতেও কোনো আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়নি। তাই এসব মিলিয়েই পদক এসেছে ভারতের ঝুলিতে।