অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)-এর খসড়া সংবিধান নিয়ে চলমান মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত ২ এপ্রিল আইনজীবীদের আপত্তি শুনেছে এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখ নির্ধারণ করেছে। জাস্টিস পিএস নরসিমা এবং জাস্টিস জয়মাল্য বাগচীর সমন্বয়ে গঠিত এসসি বেঞ্চ সিনিয়র অ্যাডভোকেট রঞ্জিত কুমার এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট মেনকা গুরুস্বামীর যুক্তি শুনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুনানি বিকেল ২টায় শুরু হবে বলে জানা গেছে। ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে এই শুনানিকে ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে, কারণ এটি খসড়া সংবিধানের অনুমোদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে।
২০২২ সালের জুলাই থেকে এআইএফএফ-এর খসড়া সংবিধান প্রস্তুত হলেও, বিভিন্ন পক্ষের আপত্তির কারণে এর অনুমোদন বিলম্বিত হয়েছে। গত ২ এপ্রিলের শুনানিতে এআইএফএফ-এর উদ্বেগগুলো উত্থাপনের জন্য একটি উপযুক্ত মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট উভয় আইনজীবীকে তাদের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৬০ মিনিট করে সময় দিয়েছিল। এই প্রক্রিয়া ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী সংবিধান প্রণয়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
খসড়া সংবিধান নিয়ে আপত্তি
শুনানির শুরুতে সিনিয়র অ্যাডভোকেট রঞ্জিত কুমার খসড়া সংবিধানের সংশোধনীগুলো বেঞ্চের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বর্তমান খসড়ায় প্রস্তাবিত ১০ সদস্যের কমিটির পরিবর্তে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। এই কমিটিতে তিনজন সহ-সভাপতি এবং একজন মহিলা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কুমারের যুক্তি ছিল যে, এই পরিবর্তন সংবিধানকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক এবং সমৃদ্ধ করবে।
এছাড়াও, তিনি কুলিং-অফ পিরিয়ড (শীতলকরণ সময়কাল) নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় ক্রীড়া কোড অনুযায়ী, এই নিয়ম শুধুমাত্র সেক্রেটারি এবং ট্রেজারার পদের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, এআইএফএফ-এর সংবিধানকে জাতীয় ক্রীড়া বোর্ড এবং ফিফা (ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন)-এর নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এই যুক্তি ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
অন্যদিকে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মেনকা গুরুস্বামীও তাঁর যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি খসড়া সংবিধানের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এআইএফএফ-এর পক্ষ থেকে উত্থাপিত উদ্বেগগুলো তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে ফুটবল প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শুনানির গতি ও প্রতিক্রিয়া
৬০ মিনিটের মধ্যে যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন হওয়ায় জাস্টিস নরসিম্হা তাঁর সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা সময়ের মধ্যে যুক্তিগুলো শুনে আনন্দিত।” তবে, এআইএফএফ-এর উত্থাপিত বিষয়গুলোর বৈধতা থাকলেও, এই~~এই আপত্তিগুলো আরও বিলম্বের কারণ হতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন। এই ধীর প্রক্রিয়া এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করেছে এবং ভারতীয় ফুটবল সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে।
ভারতীয় ফুটবলের জন্য গুরুত্ব
এআইএফএফ-এর নতুন সংবিধান ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০২২ সালে প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বে এই খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করা হয়েছিল। এতে বেশ কিছু আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে, যেমন ১৪ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচজন প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি এবং অফিসারদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে অপসারণের বিধান। এছাড়াও, সাধারণ পরিষদে রাজ্য ফেডারেশনগুলোর প্রতিনিধিত্ব এবং ভোট কমানোর প্রস্তাবও রয়েছে।
এই পরিবর্তনগুলো ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনকে আরও গণতান্ত্রিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করার লক্ষ্যে করা হয়েছে। বিচারপতি রাও তাঁর প্রতিবেদনে বলেছেন, “নতুন সংবিধানের মাধ্যমে খেলোয়াড়, রেফারি, কোচ এবং ক্লাবগুলো এআইএফএফ-এর শাসনে কণ্ঠস্বর পাবে। এটি ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।”
বর্তমান কমিটি ও কল্যাণ চৌবে’র ভবিষ্যৎ
বর্তমান এআইএফএফ নির্বাহী কমিটি এবং প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে’র ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচিত এই কমিটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত। তবে, নতুন সংবিধান অনুমোদিত হলে এবং এআইএফএফ তা দ্রুত গ্রহণ করলে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি, কিছু সদস্য কল্যাণ চৌবে’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছিলেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নতুন সংবিধানে এই প্রক্রিয়ার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সমর্থকদের প্রত্যাশা
ভারতীয় ফুটবল সমর্থকরা এই মামলার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। একজন সমর্থক বলেন, “আমরা চাই একটি শক্তিশালী সংবিধান, যা ভারতীয় ফুটবলের জন্য পথপ্রদর্শক হবে।” আরেকজন বলেন, “এই বিলম্ব আমাদের হতাশ করছে। আমরা দ্রুত সমাধান চাই।” ফুটবল সম্প্রদায়ের আশা, ১৬ এপ্রিলের শুনানি এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটাবে এবং ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।
এআইএফএফ-এর খসড়া সংবিধান নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ১৬ এপ্রিলের শুনানি এই খেলাটির প্রশাসনিক কাঠামোকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। সমর্থক এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আশা করছে যে, এই সংবিধান ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।